Published: 17 আগ 2017

বিভিন্ন রাজবংশে সোনার কয়েন

ভূমিকা

গত 2000 বছর ধরে ভারতের সাথে সোনার সম্পর্ক রয়েছে৷ আর এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সোনার কয়েন যা কোন ব্যক্তি বিশেষের সমৃদ্ধি এবং আর্থিক অবস্থার মানদণ্ড পরিমাপের গুরুত্বপূর্ণ উৎস বলে বিবেচিত হত৷

দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কয়েনগুলিকে খুঁজে বার করার পরে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের ব্যবসার শিকড় খুঁজে বার করতে সমর্থ হয়েছি৷ আমাদের সুবর্ণময় ইতিহাসের পাতা থেকে আসা বিভিন্ন সোনার কয়েনগুলিকে একবার দেখে নেওয়া যাক:

কুষাণ (30-375 খ্রীষ্টাব্দ)

সম্রাট ভীমকদফিসেস কুষাণ কয়েনের যুগ শুরু করেন৷ তারা গুপ্তদের মত পশ্চাদগামী কয়েনগুলিকে প্রভাবিত করে:

  • শিব, বুদ্ধ এবং কার্তিকের মত দেবতাদের চিত্র খোদাই করা থাকত কয়েনের এক পিঠে এবং অন্য পিঠে থাকত রাজার চিত্র (পূর্বগামী গ্রেসো-ব্রাক্টিয় শাসকদের সদৃশ)৷
  • মাঝে মাঝে তারা গ্রীক, মেসোপটেমিয়, জোরোয়াসট্রিয় এবং ভারতীয় পুরাণের চরিত্রও খোদাই করত৷

গুপ্ত (320-480 খ্রীষ্টাব্দ)

এই যুগে বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হওয়া সোনার কয়েনটির নাম ছিল ‘দিনারাস’ যাকে বিশেষজ্ঞরা বলেন ‘স্বর্ণ বৃষ্টি’৷
Guptas Guptas

নকশা:
  • এক পিঠে শাসকের চিত্র এবং অপরদিকে দেবীর চিত্র৷
  • সাধারণত, এই কয়েনের মধ্য দিয়ে শাসকের বীরত্ব এবং গুণমানের কাহিনীর গুণকীর্তন করা হত৷
  • কখন আবার, রাজা এবং রাণী একত্রে কোন কয়েন জারি করতেন এবং সেক্ষেত্রে তাদের যুগল দাঁড়িয়ে থাকার চিত্র দেওয়া থাকত সেখানে৷
  • গুপ্ত কয়েনের বিপরীত দিকে, বসা বা দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় লক্ষ্ণীর মত দেবীর চিত্র থাকত৷

পাল (775-810 খ্রীষ্টাব্দ)
এই সাম্রাজ্যে একটি সোনার কয়েন জারি করা হয় যার ওজন ছিল 7.59 গ্রাম৷

নকশা:
  • এক পাশে, ডান হাতে বর্ষা নিয়ে রাজা ঘোড়া সওয়ারি করছে এমন চিত্র খোদাই করা হত, যেখানে বোঝানো হত রাজা সিংহ বা ভাল্লুকের শিকারে বেড়িয়েছেন৷
  • বিপরীত দিকে, একটি পদ্মের মধ্যে দেবী লক্ষ্মী অধিষ্ঠিত থাকেন এবং তাঁর প্রতি হাতে থাকে একটি করে পদ্ম, দুই পাশে একটি করে পবিত্র জলের পাত্র থাকে৷

হৈসল এবং কদম্ব (1045-1150)
রাজত্ব: 1047 থেকে 1098 খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত হৈসল সাম্রাজ্য দক্ষিণ ভারতে রাজত্ব করে৷

নকশা:
  • সোনার কয়েনের ওজন 4 গ্রাম
  • তাদের সিংহ এবং আরেকটি কোন বস্তু ছিল যেগুলির দুপাশের একদিকে ছিল সূর্য এবং অন্য দিকে ছিল চাঁদ।
  • অন্য পিঠে, কন্নড় ভাষায় খোদাই করা ছিল৷

রাজত্ব: কদম সাম্রাজ্য

নকশা:
  • কদম সাম্রাজ্য দ্বারা জারি করা কয়েনেও কন্নড় বর্ণমালা ব্যবহার করা হয়েছিল।
  • এই কয়েনগুলিকে পদ্ম কয়েনও বলা হত, যেহেতু এটির কেন্দ্রীয় চিহ্ন বেশিরভাগ সময় একটি পদ্ম ছিল।
  • কিছু কয়েনে কন্নড় লিপির সাথে পদ্মের বদলে সিংহের মুখ ছিল৷
  • প্রাচীন ভারতে তৈরি হওয়া কয়েনগুলির মধ্যে কদম্ব কয়েন সবথেকে ভারি ও খাঁটি সোনার কয়েন ছিল।

ঘুরি (12শ শতাব্দীর শেষের দিক)
কয়েনগুলিকে বলা হত ‘দিনার’, এগুলি জারি করেছিলেন মুহাম্মদ ঘোর।


নকশা:

  • রাজপুর বংশের মুদ্রার শৈলিই এই কয়েনগুলি অনুসরণ করে।
  • এটির একপাশে দেবী লক্ষ্মী অধিষ্ঠিত আছেন আর অন্য পাশে দেবনাগরী লিপিতে লেখা আছে শ্রীমদ মুহামদ বিনি সাম।

বিজয়নগর রাজবংশ (1336-1646)
এই কয়েনগুলির ওজন 3.4 গ্রাম এবং ডাচ, ফরাসি এবং ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কয়েনগুলিকে প্রভাবিত করে৷

নকশা:

  • বিজয়নগর রাজবংশ যে সোনার কয়েন চালু করে যার এক পাশে ছিল এক পবিত্র চিত্র এবং অপর পাশে ছিল রাজকীয় কিংবদন্তীর চিত্র।
  • বেশিরবাগ সোনার কয়েনে ভগবান তিরুপতি ভেঙ্কেটেশ্বরের ছবি ছিল তা একাই হোক বা তার দু’জন স্ত্রীর সাথেই হোক।

মুঘল (1526-1857)
মুঘলরা সোনা, রূপা এবং তামায় তৈরি কয়েন চালু করেছিল। সোনার কয়েনকে বলা হত মোহর এবং তার ওজন ছিল 10.95 গ্রাম।

নকশা:
  • মুঘল কয়েনগুলিতে অভিনব নকশা পাওয়া যায়, এই কয়েনগুলির পশ্চাদপটেও ফুলের প্যাঁচানো নকশা ছিল।
  • কয়েনের মধ্যে রাশি, প্রতিকৃতি, সাহিত্যিক গাথার ছাঁচ বানানো হত।
  • মুঘলরা তাদের সম্পূর্ণ সাম্রাজ্য কাল ধরে মুদ্রা ব্যবস্থায় সমন্বয় সাধন করে গেছে।
  • শাহজাহান তার সময়কালে কয়েনের নকশায় মান্যতা আনেন।
  • ঔরাঙ্গজেব, তার রাজত্বকালে কয়েনের ওপরে থাকা ইসলামি চিহ্নকে নির্মূল করেন এবং ফরম্যাটে মান্যতা আনেন।
  • কয়েনের ওপর শুধুমাত্র শাসক ও মুদ্রকের নাম, এবং চালু হওয়ার তারিখটি ছিল।

আমরা 2000 খ্রী.পূ. পেরিয়ে এসেছি। আজও, ভারতীয় সোনার কয়েনের একই অবস্থা, মর্যাদা এবং মূল্য রয়েছে তবে এখন সাথে এসেছে কিছু আধুনিক বৈশিষ্ট্য যেমন চুরি প্রতিরোধকতা।
এত বছরের মধ্যে আপনি বা আপনার প্রিয় কেউ কি কোন সোনার কয়েন সংগ্রহ করেছেন? নিচের মন্তব্যের স্থানে তাহলে ছবি শেয়ার করুন!
Sources:
Source1, Source2, Source3, Source4, Source5, Source6, Source7, Source8, Source9, Source10, Source11, Source12