Published: 27 সেপ্টে 2017

মুঘলদের স্বর্ণময় যুগ

আমরা যখন প্রায়ই অতীতের যুগের কথা ভাবি, তখন তার জাঁকজমক এবং রাজকীয়তা আমাদের মগজে অবশ্যই আসে৷ যে প্রাসাদগুলিতে আমাদের পূর্বপুরুষরা থাকত তা সেই সময়ের রাজা ও রানিরা কেমন জীবনযাপন করত তার সাক্ষ্য দেয়৷ এইরকম একটি যুগ যার সম্পর্কে মনমুগ্ধ হয়ে জানতে ইচ্ছা করে সেটি হল মুঘল যুগ৷

মুঘলরা নিজেদের গহনায় সাজাতে ভালোবাসত৷ রাজা, রানি এবং রাজ পরিবারের বাকি সদস্যরা মাথা থেকে পা পর্যন্ত সোনা ও অন্যান্য মূল্যবান গহনায় ঢেকে রাখত৷ তবে, ঠিক কিধরণের সোনার গহনা তারা সবাই রাজভাণ্ডারে রাখত? মুঘলরা তাদের আগের শাসকদের থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিল আর তাই তাদের গহনাতে হিন্দু ও মুসলিম শিল্প শৈলির সংমিশ্রণ দেখা যায়৷

তাহলে, প্রথমে এই মূল্যবান অলঙ্কারগুলির ওপর তাদের শিল্পকর্ম এবং চারুকলা দেখে নেওয়া যাক৷

ডিজাইন ও পদ্ধতি:

  • ফুল ও জীবজন্তুর ডিজাইন

    ডিজাইনগুলির মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত থাকত জ্যামিতিক আকার, জীবজন্তু ও ফুলের ধরণ, তবে মানবাকৃতির খোদাই করা চিত্র ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ ছিল৷

  • কুন্দন পদ্ধতি

    কুন্দর প্রকৌশলের সূক্ষ্মতা এই রাজকীয় অধ্যায়েই জহুরিরা অর্জন করেছিল৷ এই পদ্ধতিতে, যে সোনা গহনা তৈরির জন্য ব্যবহৃত হত তা ঘরের তাপমাত্রাতেই ঢালাই করা হত৷

  • রত্নখচিত করা

    সোনার মধ্যে পাথর বসানো ছিল মুঘলদের আরেকটি কারিগরি৷

এই পদ্ধতিগুলির মাধ্যমে, বিভিন্ন সূক্ষ্ম অলঙ্কার তৈরি হত যা আজও একইভাবে সমাদৃত:

  • কানের দুল, কানের স্টাড এবং কানের দুলের-সূত্র

    মুঘল কানের দুলের বৈশিষ্ট্যের একটি বিশেষ উদাহরণ হল অর্ধচন্দ্রাকৃতি অংশের একদম ওপরে একটি ছোট কর্ণান্তর৷ এই অর্ধচন্দারকৃতি অংশ থেকে, মাছ বা একগুচ্ছ মুক্ত ঝুলতে থাকে যা মুঘল গহনার একটি জনপ্রিয় বৈশিষ্ট্য৷

  • জুতো

    রাজ পরিবারের জুতোগুলি সোনার সুতো দিয়ে বোনা হত৷ এই জুতোগুলিতে ‘মোজদি’ বলা হত৷

  • নাকছাবি

    মুঘল মহিলারাই প্রথম নাকছাবির প্রচলন শুরু করে, যা ফ্যাশান রূপে আধুনিক ভারতেও চলে আসছে৷ এই সোনার নাকছাবিগুলি অতিক্ষুদ্র পিন থেকে শুরু করে বড় নথের মত বিভিন্ন মাপের এবং রঙের হত৷ এই নাকছাবিগুলি প্রায়ই লম্বা সুতো এবং ছোট হুক দ্বারা চুলের সাথে আটকানো থাকতো৷

  • আংটি এবং হাতের অলঙ্কার

    মুঘল সাম্রাজ্যের সম্রাটরা বড় এবং প্রচুর আংটি পরত যা সম্পূর্ণ সোনা বা মিনাকরি কাজ করা সোনায় তৈরি হত আর এটির বৃত্তাকৃতি বা চৌকাকৃতি হত৷ কয়েকটি বিশাল আংটি দু’টি তিনটি আঙ্গুল ঢেকে রাখত৷ মহিলাদের পরিহিত কিছু আংটিতে তাদের প্রতিবিম্ব দেখার জন্য ছোট আয়নাও থাকত৷ মহিলাদের হাতের অন্যান্য অলঙ্কারের মধ্যে ছিল এমন গহনা যা তাদের সম্পূর্ণ হাত ঢেকে রাখত, এমন সূত্র যা আংটি থেকে চুড়ি পর্যন্ত প্রসারিত হত এবং এগুলি “হাতফুল” নামে পরিচিত ছিল৷

  • নেকলেস এবং চেন

    পুরুষ ও মহিলা উভয়ই গলার অলঙ্কার পরত৷ এই পরিসরে ভারি নেকলেস থেকে শুরু করে হালকা-ওজনের চেন ছিল যা লম্বাও হত আবার ছোটও হত৷ আকার যাই হোক না কেন, এগুলি যারাই পরত তা তাদের এক মার্জিত এবং চমকপ্রদ চেহারা দিত৷

  • চুড়ি এবং ব্রেসলেট

    সোনার বালা বা চুড়ির মধ্যে পাথর খোদাই সেগুলিতে এক অনন্য এবং আকর্ষণীয় আকার দিত৷ এই ব্রেসলেটগুলির প্রতিটি প্রান্ত আঁকড়া দিয়ে বন্ধ থাকত৷ এই হাতের কব্জির অলঙ্কারগুলি মিনাকরি কাজ করা সোনা দিয়ে তৈরি হত আর তাকে আরও অপূর্ব করে তোলার জন্য নিখুঁত ফুলের নকশা দেওয়া হত৷

এর বাইরে অন্য ধরণের সজ্জা এবং অলঙ্করণেও সোনা ব্যবহৃত হত৷ এর অন্তর্ভূক্ত:

  • মুকুট
  • কোমরবন্দ এবং হিপ চেন
  • পাগড়ির অলঙ্কার এবং অন্যান্য মস্তকের অলঙ্কার
  • অনন্ত

এই রাজকীয় অলঙ্কারগুলি ভারতীয় রাজ ঐতিহাসের রুচি এবং ঐতিহ্যের এক খোলা জানলা আর সোনা সেখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে৷