Published: 15 মে 2018

সোনা কিভাবে পরিশোধিত হয়?

Various techniques used to refine gold

আপনি কি জানতেন যে মানব ইতিহাস জুড়ে 190,040 টনেরও বেশি সোনা খনন করা হয়েছে? এক্ষেত্রে বিভিন্ন পদ্ধতি আছে খনন করার পরে এবং আমাদের হাতে গহনা, বার, কয়েন অথবা প্রাত্যহিক জীবনে সোনা যেভাবে ব্যবহৃত হয় সেইভাবে সোনাকে পাওয়ার আগে যার মধ্য দিয়ে সোনাকে যেতে হয়৷

সোনা পরিশোধন করার প্রয়োজন হয় কেন?

ভারতের অন্যতম ভালোবাসার ধাতু সোনা তার বিশুদ্ধতম রূপে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়না৷ এই ধাতুটিকে তার আকরিক থেকে নিষ্কাশিত করা হয়, যে আকরিক মাটি থেকে খনন করা হয়৷ খনন প্রক্রিয়ার থেকে পাওয়া সোনা বিশুদ্ধ হয়না৷ এটির সাথে একাধিক অপদ্রব্য মিশ্রিত থাকে যা সরানো আবশ্যক, আর সেগুলি সোনা পরিশোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা হয়ে থাকে৷

সোনা কিভাবে পরিশোধিত হয়?

সোনা পরিশোধনের জন্য বিভিন্ন প্রকৌশল এবং প্রণালী বিজ্ঞান ব্যবহৃত হয়েছে৷ তার মধ্যে কিছু দেখে নেওয়া যাক:

  1. ব্যবহার করে

    সোনা পরিশোধনের এটি সবথেকে জনপ্রিয় পদ্ধতি৷ এই পদ্ধতিতে, অপদ্রব্যগুলির দ্রবীভূত করার জন্য কড়া অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়৷ হাইড্রোক্লোরাইড অ্যাসিড এবং নাইট্রিক অ্যাসিড হল সেই ধরণের অ্যাসিড যা এই পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয়৷ যখন সোনা এই অ্যাসিড মিশ্রিত দ্রবণে ব্যবহৃত হয় তখন অপদ্রব্যগুলি সোনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ অন্যান্য দ্রব্যগুলি সরানোর পর, অংশগ্রহণে থাকা সোনার বিশুদ্ধতা 99.999% হয়৷

  2. আগুনের ব্যবহার

    সোনা পরিশোধনে আরেকটি প্রক্রিয়ায় তাপের প্রয়োগ যুক্ত থাকে৷ খাঁটি সোনা নিরূপণের এটি প্রাচীনতম প্রক্রিয়া৷ সোনার টুকরোগুলিকে একটি গলনপাত্রের (একটি এমন পাত্র যেটি অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রায় প্রতিরোধ করতে পারে) মধ্যে রাখা হয়৷ এই গলনপাত্রটিকে তারপর একটি অগ্নিকুণ্ডে স্থাপন করা হয় যেটিকে প্রায় 2,000 ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত উত্তপ্ত করা হয়৷ সোনা এই তাপমাত্রায় গলে যায়৷ তারপর এটিকে অন্য একটি পাত্র স্থানান্তরিত করা হয়, অপদ্রব্যগুলি পরে থাকে এবং অন্যান্য দ্রব্যগুলি পৃষ্ঠতলে ভাসতে থাকে৷

  3. বিদ্যুতের ব্যবহার

    বিদ্যুৎ ব্যবহার করে সোনা পরিশোধনের পদ্ধতিটি ‘ওলউইল প্রসেস’ নামে পরিচিত৷ পদ্ধতিটি এমিল ওলউইলের নামে পরিচিত হয়েছিল, যিনি এটি 1874 সালে এটি আবিষ্কার করেন৷ এটির জন্য তিনটি প্রধান উপকরণের প্রয়োজন: অ্যানোড (সোনা দিয়ে তৈরি যার পরিশোধনের প্রয়োজন), ক্যাথোড (যেটি 24-ক্যারেট সোনা দিয়ে তৈরি) এবং একটি ইলেক্ট্রোলাইট বা তড়িৎবিশ্লেষ্য দ্রবণ৷ একবার তড়িৎবিশ্লেষ্য দ্রবণে অ্যানোড এবং ক্যাথোড স্থগিত হয়ে গেলে, এটির মধ্য দিয়ে ইলেকট্রিক কারেন্ট পাঠানো হয়৷ এর ফলে সমস্ত সোনা অ্যানড থেকে ক্যাথডে যায়৷ সমস্ত অপদ্রব্য দ্রবণে দ্রবীভূত হয়ে যায়৷ এই প্রক্রিয়ার শেষে, যেটি পরে থাকে তার অত্যন্ত বিশুদ্ধ সোনার ক্যাথড৷ সোনা তারপর সরানো হয়, গলানো হয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আকার দেওয়া হয়৷

    অনুসঙ্গী: খুঁজে পাওয়া শ্রেষ্ঠ সোনার ভান্ডারসমূহ
  4. মিলার প্রক্রিয়া

    এই প্রক্রিয়াটি 99.95% বিশুদ্ধ সোনার জন্য পরিচিত৷ এই প্রক্রিয়াটি আবিষ্কারকর্তা ফ্রান্সিস বোয়্যার মিলারের নামে পরিচিত৷ মিলার প্রক্রিয়ায়, অপরিশোধিত সোনাকে প্রথমে গলানো হয়৷ তারপর এটির মধ্য দিয়ে ক্লোরিন গ্যাস পাঠানো হয়৷ গ্যাসটি অন্যান্য ধাতু ও অপদ্রব্যগুলিকে কঠিন রূপে পরিণত করে এবং সোনা থেকে সেগুলিকে আলাদা করা হয়৷ তবে এই প্রক্রিয়ার পরেও, সোনা 98% বিশুদ্ধ হয়৷ এই সোনাকে তারপর তড়িৎবিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে পুনরায় বিশুদ্ধ করা হয় যাতে প্ল্যাটিনাম এবং প্যালাডিয়াম সরানো যায়৷

  5. কুপালেশান

    কুপালেশান হল এমন একটি প্রক্রিয়া যা নিকৃষ্ট ধাতুগুলি এবং অন্যান্য অপদ্রব্যগুলি থেকে সোনা ও রূপোকে আলাদা করার মাধ্যমে আকরিককে বিশুদ্ধ করে৷ এই পদ্ধতিতে একটি কুপালের ব্যবহার করা হয়- একটি উচ্চ তাপমাত্রা প্রতিরোধী সমতল বাটি৷ এই কুপালের মধ্যে আকরিক রাখা হয় যেটি একটি বিশেষ অগ্নিকুণ্ডে স্থাপন করা হয়৷ তারপর অপদ্রব্যগুলিকে সরানোর জন্য গরম বাতাস তার মধ্য দিয়ে যায়৷ অপদ্রব্য এবং অন্যান্য ধাতুগুলি এক্ষেত্রে হয় বাষ্পীভূত হয়ে যায় অথবা অক্সিডাইস হয়ে যায় অথবা কুপালে শোষিত হয়ে যায়৷

  6. অন্যান্য পদ্ধতি:
    • যে সোনা পরিশোধন কোম্পানিগুলি বিশুদ্ধকরণের জন্য পায় সেগুলিকে বলা হয় ‘সোনার dor̕e আকার’৷ একটি dor̕eবার সাধারণত সোনা ও অন্য ধাতুর সংকর হয়৷ এটিকে একটি অগ্নিকুণ্ডে পুনরায়-তরলীকরণ করা হয়৷ যখন বোরেক্স এবং সোডা অ্যাস মিশ্রণে মেশানো হয় তখনসোনাকে অপদ্রব্য এবং অন্যান্য ধাতুগুলির থেকে আলাদা করা হয়৷ আর এই ভাবেই বিশুদ্ধ সোনা পাওয়া যায়৷
    • b. বড়-মাত্রার সরঞ্জাম ছাড়াও সোনার পরিশোধন সম্ভব৷ এই প্রক্রিয়ায়, প্রথমে সোনার পরিশোধনের জন্য নাইট্রিক অ্যাসিড প্রয়োজন৷ তারপর, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড অথবা মিউরিয়েটিক অ্যাসিড মিশ্রণে দেওয়া হয়৷ একবার মিশ্রণ প্রশমিত হয়ে গেলে, দ্রবণটি ফিল্টারিং করে অপদ্রব্যগুলি সরানো হয়৷ যেহেতু অনেক অ্যাসিড যোগ করা হয়, অবশিষ্টাংশ সেই অ্যাসিডগুলি নিউট্রিলাইজ বা প্রশমণ করার জন্য ব্যবহার করা হয়৷ একবার সবকিছু হয়ে গেলে, ফলাফলস্বরূপ পরে থাকা কর্দমাক্ত অধঃক্ষিপ্ত অংশটিই সোনা! এটি কর্দমাক্ত পদার্থটিকে জলের মধ্য দিয়ে পরিষ্কার করতে হয় এবং অ্যাকুয়ানাস (জলীয়) অ্যামোনিয়ার সাথে ব্যবস্থা নিতে হয়৷ এই ব্যবস্থাপনার ফলে সাদা বাষ্পীভূত রূপ পাওয়া যায়৷ আরেকবার ধুয়ে নেওয়ার পরে, শুষ্ক করতে হবে এবং পরিশোধিত সোনা পাওয়া যাবে৷
অনুসঙ্গী: সোনার সুতো প্রস্তুতি

উপরে উল্লেখিত সমস্ত প্রক্রিয়াগুলির মধ্যে, ওলউইল প্রক্রিয়াটি সোনা পরিশোধনের জন্য সেরা কৌশল হিসাবে পরিচিত৷ কারণ এটির থেকে সাফল্যের সাথে 99.99% বিশুদ্ধ সোনা পাওয়া সম্ভব৷ এই প্রক্রিয়ায় যে পরিমাণ খরচ ও সময় দিতে হয় সেটি অবশ্য এই প্রক্রিয়াটির একমাত্র সম্ভাব্য অপূর্ণতা৷