Published: 17 আগ 2018
কিভাবে মুঘল আমলের সোনার গহনা আড়ম্বরকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছে
![Women Wearing Traditional Mughal Gold Jewellery Women Wearing Traditional Mughal Gold Jewellery](/sites/default/files/styles/single_image_story_header_image/public/How%20Mughal%20gold%20jewellery%20redefines%20elegance.jpg?itok=CMG3zWlQ)
মুঘলরা ভারতে 16শ শতাব্দিতে আসে এবং নিজেদের সাথে নিয়ে আসে অতুলনীয় প্রতিভাশালী এবং সুদক্ষ শিল্পীদের যারা সোনার গহনাকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করেছিল এবং সেই সময় অলংকরণের চারুকলাকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছিল৷ সেই যুগের কিছু সেরা পরিচিত জহুরি মুঘলদের অধীনে কাজ করত৷ মুঘল গহনা অপূর্ব সুন্দরভাবে খচিত এবং তাদের ডিজাইনে সূক্ষ্মতার মাত্রাই সেগুলিতে আলাদা করত৷
সেই সময়ের গহনাগুলি ক্ষমতা ও সমৃদ্ধির প্রতীক ছিল৷ রত্ন খচিত পাগড়ি, পদাঙ্গুলীর আংটি বা চুটকি, নেকলেস ইত্যাদির মত ভারী গহনা পরে রাজ পরিবারের সদস্যরা তাদের সামাজিক স্থিতি প্রদর্শন করত৷ মুঘলরা মধ্য প্রাচ্য থেকে আসা ডিজাইনগুলির সাথে ভারতের পরিচয় করায়, হিন্দু ও মুসলিম শৈলির একটি মিশ্রণ ক্রমশ বর্ধিত হয়৷
অনেক মুঘল রাজাই রাজপুত রাজকন্যাদের বিয়ে করেছিলেন বলে রাজপুত শিল্পীরা মুঘল ঘরানায় চলে আসে৷ এর ফলে গহনার ক্ষেত্রে মুঘলদের সূক্ষ্ম ডিজাইনের সাথে রাজপুতদের নিখুঁত কারুকাজের একটি অভিনব একত্রীকরণ হয়৷
মুঘল গহনা- প্রস্তুতির কৌশল
বিখ্যাত কুন্দনের গহনা মুঘলরাই জনপ্রিয় করে তুলেছিল৷ ঘরোয়া তাপমাত্রায় সোনার ওপর পাথরগুলির সেটিং করার চারুকলা মুঘল আমলের একটি স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্যমূলক গহনা-প্রস্তুতির কৌশল৷ কুন্দন শব্দটির অর্থ অত্যন্তমাত্রায় বিশুদ্ধ সোনা আর তাই অত্যন্ত বিশুদ্ধ এবং সম্পূর্ণ গলিত সোনা এই কুন্দন গহনায় ব্যবহৃত হয়৷
রাজস্থানী প্রাচুর্যপূর্ণ গহনা জারাওতার শিকড় মুঘল গহনাতেই খুঁজে পায়৷ এক্ষেত্রে নমনীয় সোনার ওপর পাথর সেট করার জন্য তিন-স্তর বিশিষ্ট কার্যক্রমের প্রক্রিয়া নিযুক্ত থাকে৷
কলাইয়ের কাজ বা মীনাকরীর কাজও মুঘল যুগেই সমৃদ্ধি পায়৷ মীনাকরীর কাজ একটি সময়-সাপেক্ষ কৌশল যেটি গহনার দুই পার্শ্বেই ফুলের ফিনিশ তৈরি করে৷ তাছাড়াফিলিং (সোনার তার পরষ্পর গ্রথিত হয়ে প্রস্তুত গহনা) এবং থেওয়া- (গলিত কাঁচের ওপর সোনার ফলকে নিখুঁত কাজ করা গহনার কাজ) মত জটিল কৌশলগুলি দৃষ্টান্তমূলক এবং অনন্য মুঘল শিল্পকলাকে প্রতীকায়িত করে৷
বিশুদ্ধ মুঘল সোনার গহনা
-
একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় মুঘল গহনার ডিজাইন ছিল অর্ধচন্দ্রকলা এবং বৃন্ত৷ কানের দুলগুলি সম্পূর্ণ কান জুড়ে অর্ধচন্দ্রাকারে তৈরি হত যার ওপরে একটি ছোট বৃন্ত থাকত৷
- মুঘল সম্রাটদের পরিহিত সিল্কের পাগড়িগুলি সোনায় মীনাকরী কাজ করা অলংকার দিয়ে সাজানো থাকত৷
- কব্জির অলংকারগুলি (কড়া, বালা, ব্রেসলেট) বেশিরভাগ সময় কলাই করা সোনা দিয়ে তৈরি হত যেগুলিতে নিখুঁত এবং মার্জিত ফুলের ডিজাইন থাকত৷
- সম্রাটরা যে বিশাল বড় আংটিগুলি পরত তা কাঁটি সোনায় বা কলাই করা সোনায় তৈরি হত৷
- মুঘল রাজ্ঞীরা প্রায়সই নিখুঁতভাবে কাজ করা গোল্ড-প্লেটেড নূপুর পরত৷
-
মুঘল যুগের একটি অন্যতম জনপ্রিয় সোনার সাজের সরঞ্জাম ছিল ‘নথ’৷ এই নাকছাবিটি বৃত্তাকার সোনার তার দিয়ে তৈরি হত যার মধ্যে চুণী এবং মুক্তোর মত পাথর গ্রথিত থাকত আর প্রতিটি মুঘল সম্রাজ্ঞী এটি পরত৷
- রাজ পরিবারের মহিলারা খিল বা দড়ি দেওয়া অনন্ত পরত যেগুলি খাঁটি সোনায় অথবা কলাই করা সোনায় তৈরি করা হত৷
- ‘কানফুল’ ঝুমকো এই সময়ই উঠে আসে; এগুলির বৈশিষ্ট্য ছিল এগুলিতে একটি চেন এবং একটি সুন্দর ফুলের নকশা সংযুক্ত থাকত৷
- মুঘলকা সোনার সুতো দিয়ে এম্ব্রোডারি করা বিভিন্ন স্টাইলের জুতোও তৈরি করেছিল যেগুলি মোজড়ি নামে পরিচিত ছিল৷
মুঘল সময়কালের এই সোনার গহনা প্রস্তুতির কৌশল এবং অলঙ্কৃত ডিজাইনগুলি উত্তর ভারত জুড়ে সমাদৃত হয়ে আসছে, বিশেষত আধুনিক কালের রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা এবং গুজরাটের মত রাজ্যগুলি জুড়ে৷ তবে আজকাল মুঘল সোনার গহনার রাজকীয় ডিজাইনগুলি আন্তর্জাতিক সীমাও অতিক্রম করেছে এবং সারা দুনিয়া জুড়ে স্বীকৃত এবং সমাদৃত হয়ে চলেছে৷