Published: 04 সেপ্টে 2017

সোনা, সমগ্র একটি দেশের উদ্ধারকর্তা

গত দশকের মধ্যে, ভারতবর্ষ আরও অনেক স্টার্ট আপ কোম্পানির সাথে নিজেকে বদলে ফেলেছে, যে কোম্পানিগুলি মোবিলিটি, ই-কমার্স, আই.টি ইত্যাদির মত বেশি লাভজনক সেক্টারে উঠে আসছে। আর এই পরিবর্তন কেবলমাত্র শহরগুলি মার্জিত হলে, পণ্য ও পরিষেবার খরচ বাড়লে এবং নিয়োগযোগ্যতা বৃদ্ধি পেলেই চলার সম্ভাবনা থাকে। আজ, ভারতীয় অর্থনীতি বিশ্বের সপ্তম-বৃহত্তম (অত্যল্প GDP দ্বারা পরিগণিত) এবং ক্রয় ক্ষমতার সমতায় (purchasing power parity, PPP)তৃতীয়-বৃহত্তম দেশ।

তবুও, 1990 সালে, ভারত এমন এক গুরুতর আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখিন হয়েছিল; যা দেশকে আর্থিকভাবে বিকলাঙ্গ করে দিতে পারত। সরকার প্রায় অচল হতে বসেছিল, কারণ সরকার পেমেন্টের ভারসাম্য (balance of payments, BOP) রক্ষা করতে সমর্থ ছিলনা। বিদেশী রিসার্ভও অনেক পরে গেছিল তাই ভারত তিন সপ্তাহের দরে আমদানিতে লগ্নি করতেও অসমর্থ ছিল। এই আর্থিক সঙ্কটের প্রাথমিক কারণ ছিল 1980-র দশক থেকে হয়ে আসা বিশাল আর্থিক অসাম্য, যা গাল্ফ যুদ্ধের ফলে আরও খারাপ হয়ে যায়, দেশে এক বিশাল তেল আমদানির রসিদ বাকি থেকে যায়, রপ্তানি পরে যায় এবং ক্রেডিট শুষ্ক হয়ে যায়। দশকের শেষের দিকে, ভারতবর্ষ গুরুতর আর্থিক সমস্যায় পরে।

1991 সালে, চন্দ্র শেখর সরকার BOP সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক আর্থিক তহবিল (International Monetary Fund, IMF)-এর প্রস্তাব দেয়। যদিও এই সহায়তার ক্ষেত্রে একটি গ্যারান্টির সাথে আসা প্রয়োজন ছিল, যেমনটা ইকনমিক অ্যাডভাইসারি কাউন্সিলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সি. রঙ্গরাজন প্রকাশ করেছিলেন এবং রিসার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI)-র গভর্নর একটি নেতৃত্ব স্থানীয় প্রকাশনার প্রবন্ধে বলেছেন যে “বিভিন্ন বাজারের খেলোয়ারদের সাথে কথোপকথন কালে, একটি প্রশ্ন প্রায়সই উঠে আসে, আর সেটি হল: ভারত তার সঙ্কটের মুহুর্ত কাটিয়ে ওঠার জন্য কি করেছিল? পরোক্ষ ইঙ্গিতটি খুব সহজ ছিল। ভারতের রিসার্ভে প্রচুর পরিমাণে সোনা জমা ছিল। ভারত সেটা কেন ব্যবহার করতে পারছিলনা?”

এই দৃষ্টিভঙ্গীটি IMF-এরও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়নি, যারা ভারতকে তার সোনার সম্পদ কোষাবদ্ধ করার জন্য জোর করেছিল, যাতে তার দায়বদ্ধতা পূরণের ব্যগ্রতা দেখানো যায়। ভারতের কাছে IMF-এর পরামর্শ নেওয়া ছাড়া কোন উপায় ছিলনা।

দেশ তখন 67 টন ভারতীয় সোনা রিসার্ভ বন্ধক রেখে ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড (47টন) এবং ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ সুইৎজারল্যান্ড (20টন) থেকে $2.2 বিলিয়ন ঋণ নেয়। কোন দেশের সোনা রিসার্ভ সেই দেশের চূড়ান্ত গর্ব, ফলে জাতীয় এবং রাজনৈতিক অবমাননায় ঝড় বয়ে যায়; চন্দ্র শেখরের সরকারের পতন হয়। প্রায় বেশিরভাগ রাজনীতিবিদ স্বীকার করে যে, এটি সঠিক পদক্ষেপ ছিল। প্রাক্তন গর্ভনর এস. ভেঙ্কিটারামানান একটি প্রবন্ধে রাজীব গান্ধীর সাথে কথোপকথনের কথা বলেন, যেখানে স্বর্গীয় মন্ত্রী বলেছিলেন: “সোনার ব্যবহারটা কি যদি তা দেশের কঠিন সময়ে জাতীয় উদ্দেশ্যে পাশে না থাকতে পারে?”

নতুন সরকার আসে, পি.ভি. নরসিমা রাও প্রধান মন্ত্রী হিসাবে এসে আগের সরকারের অবস্থানই সমর্থন করে, তিনি বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে ভারতের অবশ্যই বিদেশী বিনিয়োগের জন্য দ্বার খোলা উচিত, তার জন্য সেই আমলাতন্ত্র কমানো প্রয়োজন যা প্রায়ই শিল্পের নীতির নতুন পদক্ষেপ এবং গতিশীলতাকে বিকল করে দিচ্ছে। সেই সময় ডঃ মনমোহন সিংকে অর্থমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ করা হয় যার ফলস্বরূপ আর্থিক সংস্কারের পদ্ধতি চাঙ্গা ভাবে শুরু হয় যা ভারতকে আজও সুবিধা দিয়ে চলেছে।

যখন ভারতের প্রয়োজন ছিল, আমাদের সোনার রিসার্ভ হাতের নাগালেই ছিল। 18 বছর পরে, সম্পূর্ণ অধ্যায়টির বৃত্ত পূর্ণ হয়, RBI তার সম্পদ বহুমুখী করার জন্য এবং এটিকে একটি বিপদ নির্বাপক হিসাবে ব্যবহার করে সোনার পরিমাণের তিন গুণ IMF থেকে আনয়ন করে। আজ, ভারতের কাছে 557.8 মেট্রিক টন সোনা আছে, যা 1991 সালের থেকে অনেকটা বেশি। তবে এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ভারত তার বিশ্বাসযোগ্যতা অক্ষত রেখেছে।