Published: 10 আগ 2017

তাঞ্জোর চিত্রকলায় সোনা: শিল্পকলা যখন সত্যিই মূল্যবান

গহনার থেকেও অনেক বেশি মূল্যবান সোনালি শিল্পকলা। শুধু তামিলনাডুর তাঞ্জোর জেলার দিকে অগ্রসর হন এবং অতুলনীয় 'তাঞ্জোর চিত্রকলা'গুলি দেখুন।


সেগুলি কি?

তাঞ্জোর চিত্রকলা দক্ষিন ভারতে সৃষ্ট একটি জনপ্রিয় শিল্পকলা। এই চিত্রকলাগুলি ষোড়শ শতাব্দী থেকে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং চোলা সম্রাটদের শাসনকালে চিত্রিত হয়েছিল এবং চিত্রশিল্পে সোনা ব্যবহারের জন্য বিখ্যাত। যখন মারাঠারা তামিলনাডুর তাঞ্জোর আক্রমন করে তখন অনেক চিত্রশিল্পী এবং শিল্পী এখানে এসে বসবাস করা শুরু করেন এবং তাদের শাসনকালে, এই শিল্পকলা বিস্তার লাভ করে।

এই ধরণের শিল্পকলা সোনা এবং প্রায়-মূল্যবান বা বহুমূল্য পাথরের ব্যবহারের জন্য অন্য শিল্পকলার থেকে স্বতন্ত্র্য যা নক্সাগুলিকে আরও প্রাণবন্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।

প্রত্যেকটি চিত্রকলা একটি আখ্যান বিবৃত করে, সাধারণত আখ্যানগুলি হিন্দু দেব, দেবী বা সাধুসন্ত সম্পর্কিত।

প্রাচীনকালে, তাঞ্জোর চিত্রকলা সম্রাটদের দেহাবশেষের পবিত্র অন্ধকার মন্দিরে স্থাপন করা হত। একটি ক্ষীন আলোকবিশিষ্ট স্থানে, চিত্রকলাটি ফুটিয়ে তুলতে সোনা ব্যবহৃত হত।


তাঞ্জোর চিত্রকলা কিভাবে বানানো হত?

তাঞ্জোর চিত্রকলাগুলি সম্পূর্ন হাতে আঁকা এবং কোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় না।

একটি তাঞ্জোর চিত্রকলা বানাতে, প্রথমে একটি কাপড়ের ওপর একটি নকশা আঁকা হয়।

এই কাপড়টি, ঐতিহাসিকভাবে, কাঁঠাল গাছ থেকে তৈরি একটি কাঠের তক্তার ওপর লাগানো হয়। বর্তমানে, এর পরিবর্তে প্লাইউড ব্যবহৃত হয়।

চিত্রপটটি চুনাপাথর বা ফ্রেঞ্চ চক এবং একটি বাধাইয়ের মাধ্যম দিয়ে সমানভাবে প্রলিপ্ত করা হয়।

শুকিয়ে যাওয়ার পর, গাঢ় বাদামি বা কালো রঙ দিয়ে নক্সাটির রূপরেখা আঁকা হয় এবং উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার করে রঙ করা হয়।

এই চিত্রকলাগুলিতে দক্ষ তুলির টান এবং কমনীয় অবয়ব থাকে। সোনা চিত্রকলাটিকে প্রাণবন্ত করে এবং গভীরতা যোগ করে।

খ্রীস্টপূর্ব 2 এবং খ্রিস্টাব্দ 7 সময়কালের মধ্যে, এই চিত্রকলাগুলিতে সোনার ব্যবহার ভক্তির একটি অনুভূতিতে উৎসাহিত করতে সহায়তা করত।

প্রাচীনকালে, চিত্রশিল্পে শাকসব্জী বা খনিজ পদার্থের রঙ ব্যবহৃত হত। ব্যবহৃত রঙগুলি চিত্রশিল্পের বিভিন্ন বিভাগ অনুযায়ী নির্দিষ্ট ছিল। উদাহরণস্বরূপ,

  • পশ্চাদপট সাধারণত লাল বা সবুজ হত
  • ভগবান বিষ্ণুর রঙ নীল এবং নটরাজের রঙ সাদা করা হত
  • দেবীদের রঙ করতে হলুদ রঙ ব্যবহৃত হত
  • আখ্যানের ওপর ভিত্তি করে আকাশের রঙ নীল বা কালো করা হত
  • দেব দেবীদের পোশাক পরিচ্ছদ এবং অলঙ্কার খাঁটি সোনা দিয়ে করা হত।

সোনা, রত্নপাথর, মুক্তো, কাচের পুঁতি, এবং মূল্যবান পাথর চিত্রশিল্পের ওপর বসানো হত।

এটি চিত্রকলাটিকে একটি ত্রি-মুখী প্রভাব প্রদান করত।

সাধারণত এই চিত্রকলাগুলিতে সোনার পাত ব্যবহৃত হত। কখনও কখনও সোনার জল বা গুঁড়োও ব্যবহৃত হত।

খাঁটি সোনার ব্যবহার চিত্রকলাটিকে একটি অতুলনীয় চাক্ষুষ সৌন্দর্য্য প্রদান করত। যেহেতু প্রচুর পরিমাণে সোনা ব্যবহার করা হত, তাই এই চিত্রকলাগুলিকে একটি সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করা হত।

এই চিত্রকলাগুলির ঔজ্জ্বল্য 80-100 বছর স্থায়ী হত, যেহেতু খাঁটি সোনার উজ্জ্বলতা কখনও ম্লান হয় না।

তাঞ্জোর চিত্রশিল্পীদের সবথেকে-পছন্দের বিষয়বস্তু ছিল সোনার সিংহাসনে হাতে একটি ননীর পাত্র নিয়ে বসে থাকা ছোট্ট কৃষ্ণের মূর্ত্তি। তিনি ব্যপকভাবে রত্নভূষিত এবং তাঁর গহনা, পোশাক এবং সিংহাসনটি সোনা দিয়ে আবৃত থাকত।

তাঞ্জোর চিত্রশিল্পের ধরণ:

নির্দিষ্ট অঞ্চলের পছন্দের ওপর ভিত্তি করে তাঞ্জোর চিত্রশিল্পের বিভিন্ন ধরণ দেখা যায়:

 
  1. চেট্টিনাড় তাঞ্জোর চিত্রকলা
    • তাঞ্জোরে সৃষ্ট
    • 1600 খ্রীস্টাব্দ থেকে চর্চিত।
    • গাঢ় রঙ এবং পুরু রেখার বৈশিষ্ট্যযুক্ত

  2. মাইসোর তাঞ্জোর চিত্রকলা
    • মাইসোরে সৃষ্ট
    • সূক্ষ রেখা, জটিল তুলির টান এবং দেবদেবীদের কমনীয় মূর্ত্তির বৈশিষ্ট্যযুক্ত। এই চিত্রকলাগুলিকে আরও সুন্দর করে তুলতে উজ্জ্বল রঙ এবং সোনার পাতাও ব্যবহৃত হত।

এখন, চিত্রকলাগুলি প্রায় একইরকম, শুধু বর্তমান সময়ের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে ব্যবহৃত উপকরণগুলি আপগ্রেড করা হয়েছে।7অঞ্চল অনুযায়ী তাঞ্জোর চিত্রশিল্পের তাদের নিজস্ব স্বতন্ত্র্য অর্থ করা হয়ে থাকে।

Sources:

Source1, Source2, Source3, Source4, Source5, Source6, Source7, Source8