Published: 09 ফেব্রু 2018

দেখার মত একটি সোনার সিংহাসন

বছরের পর বছর ধরে ভারতের সমস্ত হারানো সম্পত্তির মধ্যে, ‘ময়ূর সিংহাসন’-এর থেকে বেশি সুন্দর এবং জমকালো বোধ হয় আর কোনটাই নয়৷ এমন একটি আকর্ষণীয় সিংহাসন যা তার নিখুঁত নকশার দ্বারা ভ্রমণপিপাষুদের এবং সাম্রাজ্য জুড়ে ঐতিহাসিকদের অভিভূত করে রেখেছিল৷

সম্রাট শাহজাহানের শাসনকালকে অনেকেই মুঘল সাম্রাজ্যের সুবর্ণ যুগ বলে মনে করে৷ শাহজাহানবাদ থেকে শাসনকার্য করা হত যেখানে প্রচুর আনন্দোৎসব হত, ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালিত হত এবং সম্রাটের স্বার্থে রাজ্যের অতিথিদের জন্য অসাধারণ অভ্যর্থনার ব্যবস্থা থাকত৷

তাঁর শাসনকালে, তাঁকে মহান রাজা ও ঈশ্বরের কার্য নির্বাহক হিসাবে ঈশ্বরের ছায়া শিরোপা দেওয়া হয়েছিল৷ তাই, তাঁর জন্য যথাযথ আসন অথবা তখৎ-ই-সুলাইমান আবশ্যক ছিল, যা তাঁর শাসনকে আরও ঘনীভূত করে৷

তিনি একটি সিংহাসন তৈরি করার জন্য গিলানি ও তাঁর কর্মীদের আদেশ দেন যা তখৎ-ই-সুলাইমানের সদৃশ৷ এটির উপরে ওঠা ধাপগুলি সমেত সম্পূর্ণটি সোনা ও রত্ন দিয়ে আচ্ছাদিত করা হযেছিল, যেখানে সম্রাট ভূমি থেকে অনেকটি ওপরে ভাসমানমান অবস্থায় আকাশের কাছাকাছি থাকতেন৷

এই সিংহাসনটি তৈরি করতে সাত বছর সময় লেগেছিল৷ এই সুন্দর সিংহাসনটি তৈরি করার জন্য খাঁটি সোনা, মূল্যবান রত্ন এবং মুক্তা ব্যবহার করা হয়েছিল৷ কোন খরচই বারতি ছিলনা৷ এমনকি, এটির নির্মাণ খরচ তাজমহলের থেকেও বেশি ছিল!

শাহজাহানের শাসনকালের সপ্তম বর্ষ উদযাপনের দিন, 1635 সালের 22শে মার্চ এই সিংহাসনটির উদ্বোধন হয়৷ এই তারিখটি জ্যোতিষবিদরা নির্বাচন করেছিল এবং রমদান এং নউরাজের শেষে ঈদ-উল-ফিতরের দিন পরেছিল বলে দিন শুভ ছিল বলে তাদের মত ছিল৷

সিংহাসনটি কিছু মানুষের দেখার জন্য ছিল যার মধ্যে ছিল সংখ্যালঘু পারিসদ, অভিজাত ব্যক্তি এবং পরিদর্শনে আসা বিশিষ্ট ব্যক্তি৷ প্রাথমিকভাবে, এটিকে সহজে বলা হত তখৎ-মুরাস্সা অথবা রত্নখচিত সিংহাসন৷ কিন্তু ঐতিহাসিকরা এটিতে ময়ূরের মূর্তির বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করার পর তারাই এটিকে ময়ূর সিংহাসন হিসাবে পরিচিতি দেয়৷

ঐতিহাসিক ও পর্যটক আবদুল হামিদ লাহোরির কথায়:

“সময়ের সাথে, অনেক মূল্যবান রত্ন সাম্রাজ্যিক রত্ন-কক্ষতে চলে এসেছিল, যার প্রতিটি হয়তো সুন্দরীর কর্ণভূষণ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে অথবা ঈশ্বরের সজ্জাদ্রব্য হিসাবে অলংকৃত হয়েছে৷ সম্রাটের সম্পদের ওপর ভিত্তি করে, দূরদর্শী ব্যক্তিদের মতে, এই ধরণের বিরল রত্নগুলি থাকলে তা তাদের সাম্রাজ্যের অধিকার বজায় রাখতে সহায়তা করবে, সেইরকমই হল সম্রাটের সিংহাসন৷ যার ফলে সেই রত্নগুলি এমন কোন ব্যবহারে আসবে যারা দেখবেন তারা সবাই এর প্রশংসা করবেন এবং রাজপরিবারের ঐতিহ্য দিপ্তোজ্জ্বল হয়ে উঠবে৷”

দুঃখের বিষয় হল, যখন নাদির শাহ ইরানে ক্ষমতায় আসেন তখন তিনি হোতাকি সৈন্যদের পরাস্ত করতে চান যারা সুরক্ষার জন্য মুঘল সাম্রাজ্যে পালিয়েছিল৷ আক্রমণের জন্য আর সাম্রাজ্যকে পরাস্ত করার জন্য এই সুযোগটাই নাদির শাহ চাইছিলেন৷ কিন্তু তিনি জানতেন, সে সমগ্র সাম্রাজ্যকে ধরে রাখতে পারবেন না আর তাই তিনি শান্তি চুক্তি করেন৷ এই শান্তি চুক্তির একটি শর্ত ছিল ময়ূর সিংহাসন৷

কারোর কারোর মতে, যখন নাদির শাহকে হত্যা করা হয়, তখন সিংহাসনটি তার সম্পদের জন্য চূর্ণ করে ফেলা হয়৷ অন্যদের মতে এটি ওট্টমান সুলতানকে উপহারস্বরূপ দেওয়া হয়৷ ঐতিহাসিকরা এখন ময়ূর সিংহাসনের ভবিষ্যত নিয়ে বিতর্ক করেন তবে এটির জমকালো আড়ম্বরকে বেশিরভাগ ব্যক্তিই মেনে নিয়েছে৷