Published: 28 আগ 2017

জহুরি-অপ্রসংশিত শিল্পী

শিল্পী তার বোনের গলায়, কানে আর হাতের নেকলেস, কানের দুল আর চুরির দিকে তাকিয়ে আর চোখ ফেরাতে পারছেনা। সে কখনও ভাবেনি গহনা কোনদিন কারোর রূপ এতটা খুলে দিতে পারে। হবু বউ হিসাবে, তার বোনকে অপূর্ব দেখাচ্ছে; শিল্পী অবাক হয়ে বলল “বাহ!” এটা শুনে পাশে বসে থাকা তার ঠাকুমে তাকে বলল “হ্যাঁ, ওকে সত্যিই অপূর্ব দেখাচ্ছে, তাই না?” শিল্পী সরলভাবে বলল, “না! আমি গয়নাগুলির জন্য বাহ বলেছি, ওকে নয়।” ওর ঠাকুমা প্রাণ খুলে হেসে উঠল আর বলল, “কি সরল রে তুই। কিন্তু তোর ‘বাহ’ এর উত্তরে আমি আগে জিজ্ঞাসা করি। তুই কি জানিস এই গয়নাটা কি? শিল্পী মাথা নাড়লো আর তখন সে বিশ্বের সোনারদের (জহুরি) এবং সোনার গহনা সম্পর্কে প্রথম জানল।

ঠাকুমা বলল যে ওর বোন যে গহনাটা পরেছে সেটা ওদের পূর্বপুরুষরা খাঁটি সোনায় তৈরি করেছিল। কিছুটা উৎসুক হলেও এখনও শিল্পী বিভ্রান্ত, ও মাথা নাড়লো আর অপলক দৃষ্টিতে ওর বোনের দিকে তাকিয়ে রইল। ওর ঠাকুমা জানত সে আরও জানতে চায়। সেই দিনের ছোট্ট জানার ফলস্বরূপ, শিল্পী তার এই মোহকেই তার কেরিয়ার হিসাবে ভেবে গহনা ডিজাইনিং কোর্স বেছে নিল।

আজ, 20 বছর পর, শিল্পী তার ঠাকুমার সাথে কথা বলছে আর সোনারের যাত্রা ব্যাখ্যা করছে। তার ঠাকুমা এবং পরিবারের অন্যান্য মহিলারা সোনা নিয়ে আলোচনার শুরুতেই বন্দনা করে। শিল্পী তার ঠাকুমাকে মনোজের সম্পর্কে বলে, সে একজন সোনার যে তাদের গহনার ফার্মে কাজ করে এবং তার সমস্ত গহনার ডিজাইনের আকার দেয়। শিল্পী মনোজের যাত্রার প্রতিটি ধাপ ব্যাখ্যা করেছিল, তার সুদূর গ্রাম থেকে ভারতের দ্রুতগামী শহরে আসার গল্প।

তার ছেলেবেলায়, মনোজের বাবা তাদের সোনার অলঙ্করণের কর্মশালায় নিয়ে গেছিল। মনোজের বাবা মনোজের ঠাকুর্দার কাছ থেকে গহনা তৈরির কারিগরি শিখেছে, সেটাই এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে চলে আসছে। এই শিল্পশালায়, তার বাবার থেকে মনোজ সোনার ফিলিংয়, সোল্ডারিং, স্যয়িং (চেরা), ফোর্জিং, কাস্টিং এবং পালিশের কারিগরি আয়ত্ত করে। সোনারের কাজ প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে। যদিও, মনোজের ঠাকুর্দা ডিজাইন করার সময় নিখুঁত স্পষ্টতা দেওয়ার জন্য জাল গহনার প্রতি গভীরে ঝুঁকতে হয়েছিল। মনোজের সরঞ্জামের মধ্যে এখন বিভিন্ন আঁতশ কাঁচ, দ্বৈত তীক্ষ্মতা যুক্ত এলইডি আলো আছে যা যথাযথ ভাবে নিখুঁত ডিজাইন পেতে তাকে সাহায্য করে।

মনোজ তার শিল্পকর্মের জন্য সাধারণত নিম্নলিখিত যন্ত্রপাতিগুলি ব্যবহার করে থাকে:

  • মানদণ্ড
  • ফিঙ্গার সাইজার
  • জহুরির নেহাই, হাতুরি, ড্যাপিং, ব্লক, ডুমিং, বেঞ্চ, পিন, ড্রিল, বাফিং

 

মনোজ সেই শহরে যায় যেখানে উপলব্ধ প্রযুক্তি তার কাজকে আগের থেকে আরও সহজ করে দেয়। যদিও, তার বাবা এবং আরও হাজার হাজার সোনার এখনও প্রথাগত পদ্ধতি ব্যবহার করে কঠোর পরিশ্রম করছে। একদন মনোজের জন্য শিল্পী অনুভব করে এই হস্তনির্মিত অলঙ্কারগুলিতে কতোটা কঠোর পরিশ্রম হয়। তাদের শিল্পকর্মের জোড়েই প্রতিটি গহনায় আসে অতুলনীয় সৌন্দর্য আর কোন এক বিশেষ দিনে তার বোনের মতই তাদের অপূর্ব সুন্দর করে সাজিয়ে তোলে।