Published: 28 আগ 2017

লক্ষ্মী- ধনসম্পত্তির দেবী

হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, ‘লক্ষ্মী’ নামটি সম্পত্তি ও প্রাচুর্যের সমার্থক, এক্ষেত্রে অবশ্য মূলত সোনার গহনা ও সোনার কয়েনকেই বোঝায়৷ সুন্দরী দেবীর প্রতিচ্ছবি সাজানো থাকে লাল শাড়িতে, অলঙ্কৃত করা থাকে সোনার অলঙ্কারে এবং সেখানে সোনার কয়েন বর্ষন করা হয় -এই হল দেবী লক্ষ্মী, যিনি ধনসম্পত্তি, সৌভাগ্য ও সৌন্দর্যের জন্য পূজিত হন৷

হিন্দু, জৈন এবং বৌদ্ধরা তাদের গৃহে এমন কি তাদের কাজের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে দেবীর আরাধনা করে, কারণ এটি বিশ্বাস করা হয় যে দেবী লক্ষ্মীর স্বর্গীয় উপস্থিতিতে তার ভক্তরা সোনা, অর্থ এবং সৌভাগ্যে সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে৷

দেবী লক্ষ্মীর সেই ক্ষমতা আছে যা দিয়ে আপনার জীবন সোনা ও সমৃদ্ধিতে পূর্ণ হয়ে উঠবে৷ তাই, প্রার্থনা করার আগে, আমরা আপনাকে সোনার দেবী সম্পর্কে কিছু আকর্ষণীয় ঘটনা ও বিশ্বাসের কথা বলে রাখি৷

  • লক্ষ্মী নামটির উৎপত্তি হয়েছে ‘লক্ষ’ থেকে যার অর্থ ‘নিরীক্ষণ করা, অনুধাবন করা, সংকল্প করা৷’ দেবী তার ভক্তদের জীবন পরিবর্তনের সুযোগগুলি নিরীক্ষণ করার জন্য এবং অনুধাবন করার জন্য এবং সেগুলিকে ফলপ্রদভাবে উদ্দেশ্য করে তোলার জন্য পথপ্রদর্শন করে৷
  • দেবীর পরিহিত সোনালী পার দেওয়া লাল শাড়ী ইতিবাচক শক্তি এবং সৌভাগ্য চিহ্নিত করে৷
  • লক্ষ্মীর সোনালী রূপ লাবণ্য আর সৌভাগ্য ছড়ায়৷
  • তার হাত থেকে পরা সোনার কয়েনের ঝরনা তাকে ‘সোনার দাতা’ হিসাবে উপস্থাপিত করে৷
  • হিন্দুপুরান অনুযায়ী, দেবী লক্ষ্মীর চার হাত মানব জীবনের চারটি উদ্দেশ্যের প্রদর্শক- ধর্ম (নৈতিক জীবন), কাম (পরিপূর্ণতা), অর্থ (সমৃদ্ধি) এবং মোক্ষ (মুক্তি)৷
  • অষ্ট (আট) লক্ষ্মী হল দেবীর আটটি উদ্ভাস যা সমৃদ্ধির আটটি রূপকে উপস্থাপিত করে৷
  • ভগবান বিষ্ণুর সাথে দেবী লক্ষ্মীর বিবাহ প্রথাগত হিন্দু বিবাহেরই দৃষ্টান্ত৷
  • অনেক সময় লক্ষ্মীকে একটি বা দু’টি হাতি এবং মাঝে মাঝে একটি পেঁচা সমেত দেখা যায়৷ কাজ, কর্মদক্ষতা এবং শক্তি ছাড়াও একই সাথে প্রচুর সমৃদ্ধির জন্য জল, বৃষ্টি এবং ফলশীলতা চিহ্নিত করে হাতি৷ যখন জগতকে অন্ধকার ঘিরে ধরে তখন জ্ঞান নিরীক্ষণ, দেখা এবং আবিষ্কারের জন্য সহিষ্ণু পরিশ্রমকে পেঁচা উপস্থাপিত করে৷ পাখি হিসাবে যে দিনের আলোয় অন্ধ, সেই পেঁচাই অন্ধত্ব থেকে মুক্তি পেতে এবং জ্ঞানের কাছে মাথা নত করতে এবং সমৃদ্ধি অর্জন করার কথা মনে করিয়ে দিতে প্রতীক স্বরূপ৷
দেবী লক্ষ্মীর আরাধনার নিয়মবিধি:
  • বিশ্বাস করা হয় যে দেবী লক্ষ্মী পরিষ্কার গৃহে প্রবেশ করেন, তাই সেক্ষেত্রে ব্যক্তিকে তার গৃহ এবং বাড়ির আশপাশ অবশ্যই পরিষ্কার রাখতে হবে৷
  • মনে করা হয় যে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনায় শুক্রবার সবথেকে সেরা দিন৷
  • ভক্তরা তাদের দেবীকে সিদুঁর, চন্দন, সোনার অলঙ্কার এবং পদ্ম ফুল দিয়ে সাজায়, সাথে দেয় পান পাতা আর সুপারি৷
  • লক্ষ্মী দেবীকে তুষ্ট করতে, ফল, গুড়, নারকেল দিয়ে তৈরি হরেক রকমের মিষ্টি আর চালের তৈরি মিষ্টি ‘প্রসাদ’ হিসাবে অর্পন করে তারপর তা ভক্তদের বিতরণ করা হয়৷
  • প্রতিমূর্তির পাশাপাশি, ভক্তরা শ্রী লক্ষ্মীর যাত্রারও পূজো করে, যে যাত্রাঘট সম্পত্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক৷
  • লক্ষ্মীর পাঁচালী, লক্ষ্মী বীজ মন্ত্র ইত্যাদির মাধ্যমে দেবী লক্ষ্মীর 108টি নাম পাঠ করে ভক্তরা দেবীকে তুষ্ট করে৷

দেবী লক্ষ্মীর স্বর্গীয় উপস্থিতিতে, আপনি আপনার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে পারেন৷ প্রচুর সম্পদ ও সমৃদ্ধির জন্য প্রতি সন্ধ্যায় তার সামনে একটি ঘি-এর প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনা করুন৷