Published: 31 আগ 2017

সম্মোহক সোনার ফিলিগ্রি গহনা

ভারতীয় সোনার গহনা তার আকর্ষণীয় ডিজাইনের জন্য সারা বিশ্ব জুড়ে বিখ্যাত৷ নিখুঁত এবং সূক্ষ্ম চারুকলার অলঙ্করণের চাহিদা সবসময়ই উচ্চমাত্রায় থাকে৷ গহনার এই প্রথাগত রূপগুলি সারা বিশ্ব গ্রহণ করেছে৷

ফিলিগ্রি হল একধরণের প্রথাগত গহনার শৈলি মূলত ইতালি এবং গ্রিস থেকে ভারতে এসেছে; ‘ফিলিগ্রি’ শব্দটি ‘ফিলাম’ থেকে এসেছে যা ‘থ্রেড’ বা সুতো শব্দের লাতিন রূপ৷

এই চারুকলাটি ইতালি এবং গ্রিস থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে তার পথ করে নিয়েছে৷ ফিলিগ্রি প্রথম মেসোপটেমিয়া এবং মিশরে তৈরি হয়েছিল, নির্দিষ্ট করে বললে ঊর্ধ্বতন মেসপটেমিয়ার মার্ডিন প্রদেশের মিদয়াত শহরের উচ্চ-দক্ষ শিল্পীর তৈরি করেছিল৷ এই অঞ্চলে ফিলিগ্রি পরিচিত ছিল ‘তেলকারি’ নামে৷ খ্রী.পূ.2500র কাছাকাছি সময় এই চারুকলাটি এশিয়া মহাদেশে জনপ্রিয়তা পায়৷

ফিলিগ্রির গহনা তৈরির জন্য, জহুরি প্রথমে দৃঢ় সোনার তার নেয় এবং তারপর ডিজাইনের খাতিরে দৃঢ় বিন্যাস তৈরি করতে সেগুলিকে পাকানো হয়৷ এই পাকানো তারগুলি পরে বিভিন্ন আকারের ছাঁচে ঢালা হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বৃত্তাকার৷ এই টুকরোগুলিকে প্রায়ই ‘গ্রানুলেশান’-এর মাধ্যমে বর্ধিত করা হয়, যেখানে ফিলিগ্রি প্যাটার্নের মাঝে সোনার ছোট পুঁতি ঝালাই করা হয়৷

প্রাচীন ভারতে, ফিলিগ্রির শিল্পীরা চাহিদার সোনার অলঙ্কার তৈরি করার জন্য গ্রাহকদের বাড়িতে যেতেন৷ শিল্পীকে সোনার কয়েন বা হলুদ ধাতুর খসখসে টুকরো দেওয়া হত যা প্রথমে ওজন করা হত এবং তারপর কয়লার পাত্রে সেগুলিকে উত্তপ্ত করা হত৷ তারপর, ফিলিগ্রি কাজের জন্য সূক্ষ্ম সোনার তারগুলি তৈরি হত৷ এই প্রক্রিয়াটি গ্রাহকের বাড়ির চত্বরে বা বারান্দায় করা হত৷ সোনার অলঙ্কারের পাশাপাশি, শুভ অনুষ্ঠানের জন্য সূক্ষ্ম জিনিষ তৈরিতেও ফিলিগ্রি ব্যবহার করা হত৷

ফিলিগ্রির ডিজাইনগুলি ভারতের পুরান কাহিনীর প্রভাবিত: দেবী-দেবতার মূর্তি, মন্দিরে খোদাই করা লিপি এবং আশেপাশে থাকা প্রাণী ও গাছপালা৷ আকর্ষণীয় বিষয় হল, ফিলিগ্রির শিল্পীরা নব্বই ধরণেরও বেশি তার ব্যবহার করে যার মধ্যে থাকে সর্পিলাকার, লতা, আকুঞ্চিত যা তাদের চারুকলার রূপরেখা পূরণ করে৷

এই ফিলিগ্রির ডিজাইন অনেকটা আজউরের ডিজাইনের সদৃশ৷ একমাত্র পার্থক্য হল ফিলিগ্রির প্রকৌশলে ছিদ্র করা হয় তৈরি করার প্রক্রিয়াকালে, কিন্তু আজউরের ছিদ্রগুলি ধাতু থেকে কাটা হয়৷

ফিলিগ্রি গহনার নিখুঁত শিল্প আধুনিক যুগেও একইভাবে প্রিয়৷ সাম্প্রতিককালে, কেবলমাত্র ঐতিহ্যগত ইন্দো-পশ্চিম পোশাকের সাথে স্টাইলের জন্যই এটি শুধু জনপ্রিয় নয়, পশ্চিমী পোশাকের সাথেও এটি এক সতেজ নতুন রূপটান দেয়৷