Published: 27 সেপ্টে 2017

সোনা খনন প্রযুক্তির গল্প

ভাবছেন তো প্রাচীন কালের মানুষরা কিভাবে সোনা খনন করত? সোনার আমানত সাধারণত দু’টি রূপে থাকে: ধাতুনালী এবং প্লেসার৷ ধাতুনালীর সোনার আমানত আকরিক শিলায় নিহিত থাকে, সোনা পাওয়ার জন্য সেগুলিকে ভেঙে চুর্ণ করে কারখানায় পাঠাতে হয়৷ বহু শতাব্দি ধরে আবহাওয়া যখন এই ধাতুনালী বা প্রবালপ্রাচীরের আমানত সম্পন্ন শিলাগুলি ক্ষয় করে, তখন সোনার মত উপাদানগুলি নদী দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং প্লেসার আমানত হয়ে যায় (এটি পাললিক সোনা নামেও পরিচিত)৷

গ্রিক এবং রোমানরা প্রাচীনকালে পাললিক ও ধাতুনালীর উভয় সোনাই নিষ্কাশন করত৷ প্রাচীনতম প্লেসার আমানত আবিষ্কার হয়েছিল খ্রি.পূ. 7ম শতাব্দিতে, যখন হিরণ্যগর্ভ আকরিক টিমোলাস পর্বত থেকে এশিয়া মাইনরের নদীগুলির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এসেছিল৷ এই ‘সাদা সোনা’ উৎপাদনের জন্য অ-পরিশীলিত পদ্ধতির প্রয়োজন-এই সাদা সোনায় আসলে দুইয়ের তিন ভাগ সোনা এবং এক এর তিন ভাগ রূপো থাকে৷

গ্রিক ও মিশরীয়দের আকরিক প্রক্রিয়াকরণ এবং পরিশুদ্ধকরণের প্রযুক্তির অন্তর্গত ছিল খ্রি.পূ. প্রথম শতাদ্বির পুরনো অগ্নিকুণ্ডের ব্যবহার৷ ইঞ্জিনিয়ার এবং গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেছে যে সেই প্রাচীন প্রযুক্তি অনুকরণ করলে 93.5 শতাংশ খাঁটি সোনা পাওয়া যায়৷

আধুনিক যুগে, মুক্ত পিট মাইনিং রয়েছে, এটি ব্যবহৃত হয় যখন সোনা পৃষ্ঠতলের খুব নিকটে অবস্থিত থাকে, এই মুক্ত পিট মাইনিং যেমন খরচ সাশ্রয়ী তেমনই পরিবেশের জন্য উপযুক্ত৷ এটি যেমন বলে ঠিক তেমনই কাজ করে- মাটিতে খননের স্থান পর্যন্ত রোডস লিডিংয়ের সাথে একটি বিশাল বড় ছিদ্র করা হয় যাতে মেশিনপত্র সহজে নেওয়া যায় ও খনি থেকে আকরিত তোলা যায়৷

যখন সোনা অনেকটা গভীরে থাকে তখন ধাতুনালীর আমানতে শাখাসম্পন্ন সুরঙ্গের সাথে খাদ তৈরি করা হয়৷ খনন প্রক্রিয়া সহজবোধ্য, তবে প্রযৌক্তিক এবং সাথে থাকে অনেক কঠিন পরিশ্রম: বিষ্ফোরকের জন্য গর্ত খোদাই করা, সেই বিষ্ফোরকগুলিকে সেট করা এবং তারপর সেই সমস্ত বিষ্ফোরণের ধ্বংসাবশেষ বেড় করে আনা৷ আকরিকগুলিকে তারপর প্রক্রিয়াকরণ করা হয় এবং তার থেকে সোনা নিষ্কাশন করা হয়৷

খননের এবং সোনা নিষ্কাশনের পদ্ধতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে৷ নতুন-তৈরি হওয়া মেশিনগুলি আরও যথার্থতার সাথে খনন করে এবং পরিবেশের ক্ষতি কম করে৷ মাটির অস্বাভাবিক গভীরে আরও দামি এলাকা জুড়ে বেশি পরিমাণ সোনার জন্য খনন কার্যে আরও ভালো মেশিনপত্রের ওপর বেশি দৃষ্টিপাত দেওয়া হচ্ছে৷ যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের অগ্রগতির মধ্যে স্বয়ংক্রিয় রোবোটও রয়েছে৷

নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির বৈজ্ঞানিকরা সস্তা এবং পরিবেশগতভাবে ফলপ্রসূ পদ্ধতির সাথে পরীক্ষা করছে যেখানে কাঁচামাল থেকে সোনাকে স্বতন্ত্র করার জন্য সায়ানাইডের পরিবর্তে সাধারণ ভুট্টার কাই ব্যবহার করা হয়েছে৷ খনন ক্ষেত্রে নতুন উদ্ভাবনের মূল লক্ষ্য হল এমন প্রযুক্তি খুঁজে বের করা যা পরিবেশের ওপর কম প্রভাব বিস্তার করবে৷