Published: 10 সেপ্টে 2018

আসামের ঐতিহ্যবাহী সোনার গহনার অলঙ্করণ

Assamese Jewellery

আসামে শতাব্দীপ্রাচীন কাল থেকেই সোনার গহনার অলঙ্করণ অত্যন্ত জনপ্রিয়শিল্প হিসাবে পরিচিত। আজ থেকে প্রায় 600 বছর পূর্বে অহম রাজবংশের রাজত্বকালে বিভিন্ন নদীর বালুচরের বালি থেকে সোনা নিষ্কাশনের বিষয়টি জনপ্রিয়তা লাভ করে। পাশাপাশি মধ্যযুগীয় আসামে সোনা উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি পাত্রে সোনার গুঁড়ো মিশ্রিত বালি ধুয়ে সোনা নিষ্কাশনের ঐতিহ্যবাহী খনি কৌশলও নিযুক্ত হত|

সে সময় সোনার গহনা পরিধান করার প্রথা শুধুমাত্র রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল| কিন্তু পরবর্তীকালে জন-সাধারণের মধ্যে সোনার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই প্রথার পরিবর্তন ঘটে|

আসামের সোনার গহনার অলংকরণে প্রধানত গাছের ফুল, লতা-পাতা, প্রাণিকূল, ঘর-গৃহস্থলীর বিভিন্ন দ্রব্যাদি এমনকি বাদ্যযন্ত্রের ডিজাইনও ব্যবহার করা হত| এর মধ্যে বেশির ভাগ ঐতিহ্যবাহী অলঙ্কারই কোনো ধাতুর ওপর সোনার পাতলা আস্তরণ দ্বারা নির্মিত হত, কিন্তু আধুনিক গহনায় মূল আধার হিসাবে সোনার ব্যবহার করা হচ্ছে|

নিম্নে আজকের দিনেও অত্যন্ত জনপ্রিয় আসামের কিছু ধ্রুপদী সোনার গহনার পরিচয় লিপিবদ্ধ করা হল:

  • লোকপারো

    যে অলঙ্কারটি ছাড়া অসমীয়া কনের বিশুদ্ধ বিবাহ সাজ সম্পূর্ণতা পায় না, তা হল লোকপারো নামক অবিকল পায়রার আকৃতির লকেট ও একজোড়া ) 'পারো' মানে পায়রা( | এগুলি সোনার সঙ্গে খাদ মিশিয়ে প্রস্তুত করা হয় এবং একসময় এগুলি অহম রাজবংশের বিশিষ্টজনেরা পরিধান করতেন | 'লোকপারো '-কে খুঁটিয়ে দেখলে লক্ষ করা যায় এটিতে মিনে করা থাকে আছে )সোনার সঙ্গে কাচ গলিয়ে পাতলা পরত সহযোগে নির্মিত)|

    সৌজন্যে : ক্রাফ্টভিলা

  • গামখারু

    এটি হল সোনা দ্বারা নির্মিত লতা-পাতার অলঙ্করণ খচিত ও আঁকড়া বিশিষ্ট ঐতিহ্যগতভাবে শুধুমাত্র পুরুষদের পরিধান যোগ্য হাতের বাজু অথবা বালা| বর্তমানে অবশ্য অসমীয়া মহিলাদের মধ্যেও এটি পরবার প্রবণতা যথেষ্ট জনপ্রিয়| বিহু পরব অথবা বিবাহের মতো কোনো বিশেষ অনুষ্টানে এটি পরার চল রয়েছে|

  • মুঠিখারু

    প্রতিটি অসমীয়া কনের গয়নার বাক্সে উপস্থিত মুঠিখারু আদপে হল, নিখাদ সোনা দ্বারা নির্মিত এক প্রকার নিরেট কাঁকন | এর সুঠাম অবয়বটির জন্য এটিকে দেখতে অনেকটা কাফ ব্যাঙ্গেলের মতোই লাগে | বিবাহ ছাড়াও বিহু বা দুর্গা পূজার মতো বড়ো অনুষ্টানে অসমীয়া মহিলাদের মুঠিখারু পরিধান করতে দেখা যায়|

  • জনবিড়ি

    স্বর্ণ নির্মিত অর্ধচন্দ্রাকৃতির লকেট ও বিলম্বিত কর্ণাভরন জনবিড়ি সাধারণত হাতে নির্মিত হয় এবং বিবাহ বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে অসমীয়া মহিলারা পরিধান করে থাকে|

  • গালাপটা

    গালাপটা বা গোলপোতা হল পুষ্পিত অলঙ্করণ খোদিত স্বর্ণ নির্মিত কণ্ঠহার| গোলপোতা আদপে একধরণের অসমীয়া চাপা নেকলেস| আধুনিক গোলপোতা ডিজাইনে মিনাকারি কাজও পরিলক্ষিত হচ্ছে যা দিয়ে নানাধরনের উজ্জ্বল গহনা নির্মিত হয় |

    সৌজন্য : আসাম ভিলা

  • ঢোলবিরি

    অসমীয়া মহিলাদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় ঢোলবিরি নামক কণ্ঠহার ও কানের দুলের সেটের স্টাইলটি আসলে বিখ্যাত বাদ্যযন্ত্রের নামানুসারে রাখা | ঐতিহ্যবাহী অসমীয়া গহনার অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন এই ঢোলবিরির ডিজাইনটি আসলে সোনার চাদরে মোড়া ঢোল আকৃতির হয়ে থাকে|

  • কারূমোণী

    আসামের স্থানীয়দের দ্বারা ব্যাপকভাবে পরিহিত কারূমোণী, সোনার তৈরি এক সূক্ষ্ম ও জটিল কারুকার্যময় গহনা।এটি একদিক চওড়া ও অন্যদিক সরু আকৃতিবিশিষ্ট, গোলাকার এবং এর মাঝখানটি ফাঁকা হয়ে থাকে | যদিও এর ডিজাইনটি মূলত কর্ণাভরনের জন্য ব্যবহৃত হত তবে পরবর্তীকালে এটি গলার হারের লকেটের ডিজাইনেও প্রযুক্ত হচ্ছে|

  • পেপা

    ঢোলবিরির মতোই এই অলংকারটিও এক বিখ্যাত অসমীয়া লোকবাদ্য, পেপার আকৃতির অনুকরণে নির্মিত | পেপা আসলে মহিষের শিং দ্বারা নির্মিত শিঙা | এর ডিজাইনটিই গহনা প্রস্তুতে ব্যবহৃত হয়েছে| একটি আদর্শ পেপা বলতে আসলে সোনার মানানসই ডিজাইন রঙ সহযোগেকণ্ঠহার ও কানের দুলের সেটকে একত্রে বোঝায় |

    সূক্ষ্ম কারিগরী ও অসীম অধ্যবসায় সাপেক্ষ ঐতিহ্যবাহী অসমীয়া গহনা বর্তমানে দুর্লভ হয়ে পড়েছে ঠিকই, কিন্তু তবুও বর্তমান যুগেও গহনার এমন অননুকরণীয় ডিজাইনের খোঁজ সেখানে মেলে যে দুনিয়ার স্বর্ণপ্রেমীদের কাছে আসামের স্বর্ণ বাজারের সুনাম এখনো অমলিন|