Published: 12 সেপ্টে 2017

সোনার ইতিহাসে কিছু মাইলস্টোন

A few milestones in the history of Gold

সোনার প্রতি মানবকুলের মোহ এতোটাই পুরনো যে তার এক ইতিহাস রচনা হয়। যদিও আমরা এখনও জানিনা মানুষ প্রথম কবে এই দ্যুতিমান ধাতুটি আবিষ্কার করেছিল, তবে প্রত্নতাত্ত্বিকরা খ্রি.পূ. 40,000 অব্দের প্রত্নপ্রস্তরযুগের গুহা থেকে সোনার ফলক খুঁজে পেয়েছিল। আমাদের প্রাগৈতিহাসিক পূর্বপুরুষরা কিভাবে সোনা সংগ্রহ করত বা আদৌ সোনা সংগ্রহ করত কিনা অথবা তারা যে গুহার বাস করত সেখানে এমনিই সোনা থাকত কিনা তা এখনও অস্পষ্ট।

সোনার সাথে মানুষের যোগাযোগের প্রথম নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায় নীল নদের দেশে-প্রাচীন মিশরে। ফ্যারাও এবং মিশরীয় সাম্রাজ্যের ধর্মযাজকরা তাদের সমাধি এবং মন্দিরে প্রচুর পরিমাণে সোনা ব্যবহার করত এবং মানব ইতিহাসে প্রথম আমরা আধুনিক যুগের মত এই দ্যুতিমান ধাতুটির প্রতি আকাঙ্খা দেখতে পাই। মিশরীয়রাই আবার প্রথম সোনার মাধ্যমে মুদ্রা বিনিময় শুরু করে এবং সেই সময় সমাজে এটির মূল্য দৃঢ় করে। এটা বলা হয় যে 1টুকরো সোনায় সেই সময় 2.5-এর সমান ভাগের রূপো পাওয়া যেতো।

মিশরীয়দের পরে, আরেকটি প্রধান সভ্যতা সোনাকে ব্যাপকার্থে গ্রহণ করে। তারা ছিল গ্রিক সভ্যতা এবং তারা সোনাকে একটি সামাজিক স্থিতির চিহ্নস্বরূপ এবং দেবতা ও উপদেবতার মাঝে গৌরবের রূপ হিসাবে দেখত। মিশরের মতই, গ্রিসে সোনা স্থিতি বা স্টেটাসের চিহ্ন, সমৃদ্ধির প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত হত, মুদ্রা হিসাবে পরিবেষিত হত। যদিও, জনপ্রিয় বিশ্বাসের বিপরীতে, অলিম্পিকের প্রথায় বিজয়ীদের সোনার মেডেল ঘোষণা আধুনিক অলিম্পিকের আগে শুরু হয়নি এবং কিছুটা গ্রিক প্রথা অনুযায়ী হয়।

বহু বছর ধরে, সোনা সমৃদ্ধির প্রতীক হিসাবে জনপ্রিয়তা পেয়ে আসছে, সাথে এটি এমন একটি মুদ্রা যা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিনিময় করা হয় এবং গহনা হিসাবে মহিলা ও পুরুষ উভয়েরই অঙ্গ শোভিত করে। 18শ শতকে আসা যাক, যখন সোনা নিজে বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়ায়। 1792 সালে, ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকার কংগ্রেস একটি আইন পাস করে যা সম্পূর্ণভাবে সোনার আধুনিক ইতিহাস পরিবর্তন করে দেয়। কংগ্রেস, মিন্ট অ্যান্ড কয়েনেজ আইন পাস করে যা মার্কিন ডলারে সোনার ফ্ল্যাট প্রাইজ(সমরূপ দাম) প্রতিষ্ঠা করে। সোনা এবং রূপোর ডলার আইনত টেন্ডার হয়ে ওঠে, যেমন স্প্যানিশ রিয়েল(স্প্যানিশ সাম্রাজ্যের একধরণের রূপোর কয়েন) করেছিল। এক শতাব্দি পরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের কিছু পরে 1873 সালে, অফিসিয়াল মুদ্রা থেকে রূপোকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং কাগজের অর্থকে আইনত টেন্ডার হিসাবে ঘোষণা করা হয়, প্রথমবার হুকুমি মুদ্রা অফিসিয়াল মুদ্রা হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত হয়।

দু’টি বিশ্বযুদ্ধের পর, বিশ্ব অর্থনীতি ধ্বংসের পথে চলে যায়। বেশিরভাগ প্রধান দেশগুলিই তাদের শহরগুলির পুনরুদ্ধারের কাজে নিয়োজিত থাকে যে শহরগুলি আক্রমণ এবং বোমা বিষ্ফোরণে ধ্বংস হয়েছিল। যদিও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই দুর্ভাগ্যের শিকার হয়নি। বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলেও তারা প্রায় নির্বিঘ্নে ছিল এবং সেই সময়ই তারা বিশ্বের সবথেকে দৃঢ় অর্থনীতি গড়ে তোলে। এই সময়ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোনার মান্যতা তৈরি করে এবং মার্কিন ডলারকে বিশ্ব মুদ্রা করে তোলে।

এখানে কোন দ্বিধা নেই যে সোনা আমাদের বিশ্ব তৈরির ক্ষেত্রে বৃহদাকার অংশ নিয়েছে, তবে একই সাথে এটি অনুধাবন করা অস্বাভাবিক কিভাবে একটি জীবনহীন ধাতু হাজার হাজার বছর ধরে প্রায় পৃথিবীর সমস্ত জীবনকে প্রভাবিত করে চলেছে-এবং ভবিষ্যতেও করে যাবে।