Published: 04 সেপ্টে 2017

ভারতীয় বিবাহে সোনার প্রতীক

বিবাহ হল একজন পুরুষ এবং একজন মহিলার মাঝে এক পবিত্র বন্ধন, ভারতীয়দের জীবনে এর একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। ভারত জুড়ে বিবাহের আচার-রীতিতে রঙীন অনুষ্ঠান আর বর্ণাঢ্য উদযাপন খুবই সাধারণ ঘটনা। বিবাহের প্রথাটি বিয়ের দিনটির উদযাপনের থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ; পবিত্র আচার এবং রীতি ধর্মীয়ভাবে পাত্র ও পাত্রী পক্ষ মেনে চলে।

বিবাহ পরবর্তীকালে, নববধূ কিছু সোনার অলঙ্কার পরে যা তাদের বৈবাহিক স্থিতির উল্লেখ করে এবং তাদের স্ত্রীধনের অংশ, এক্ষেত্রে বিবাহ অনুষ্ঠানকালে যে সম্পত্তি পাত্রী পায় বা গ্রহণ করে তাকেই তার স্ত্রীধন বলে। এই প্রবন্ধে, আমরা বিভিন্ন ধরণের সোনার অলঙ্কার দেখাব যা দাম্পত্যের পরিচায়ক:

দেজহুর: কাশ্মীরের কাশ্মীরী পণ্ডিত সম্প্রদায়ের বিবাহিত মহিলা দেজহুর পরে, যেটি মঙ্গলসূত্রের সদৃশ। এই সোনার গহনাটি একধরণের কানের দুল যেটি সোনার চেন দিয়ে উভয় কান থেকে বুক পর্যন্ত ঝুলতে থাকে, এটি তাদের স্বামীর দীর্ঘ জীবন কামনাকে প্রতীকায়িত করে।

মঙ্গলসূত্র: এই নেকলেসটি বিবাহিত দম্পতির জাত ও সম্প্রদায়ের প্রথা ভেদে বিভিন্ন ডিজাইনে পাওয়া যায়। মঙ্গলসূত্র বিবাহের একটি অত্যন্ত প্রচলিত প্রতীক।

মঙ্গলসূত্র বিভিন্ন জায়গায় নামে পরিচিত যেমন তামিলনাড়ুতে থালি কোড়ি, কেরালায় থালি (হিন্দু) বা মিন্নু (খ্রিষ্টান), অন্ধ্র প্রদেশে পুস্তেলু, কর্ণাটকে কর্থমনি পথক, বিহারে টাগ পাগ। মহারাষ্ট্র ও গুজরাতে এটিকে মঙ্গলসূত্র বলা হয়। প্রতিটি মঙ্গলসূত্রের পিছনে কোন প্রথাগত ও ধর্মীয় বিশ্বাস বর্তমান রয়েছে।

বালা: বিয়ের কনের ষোড়শ অলঙ্করণ “ষোড়শোপচার”(সোলা-শৃঙ্গার)-এর একটি অংশ হল সোনার কঙ্কণ। বিয়ের কঙ্কণ সাধারণত নিয়মিত বালা বা চুড়ির থেকে আলাদা হয়।

মহারাষ্ট্রের বিবাহিত মহিলারা সবুজ কাঁচের-চুড়ি পরে যা তাদের বৈবাহিক স্থিতির “সৌভাগ্য”কে প্রতীকায়িত করে। এই চুড়িগুলি সোনার বালার সাথে পরে, যাকে বলা হয় “পাটলি”।

পশ্চিমবঙ্গে, বিযের কনে শাঁখ আর প্রবালের বালা পরে যেগুলিকে বলে শাখা আর পলা, এগুলি কনের মা তাকে উপহার দেয়। সাতজন বিবাহিত মহিলা পাত্রীকে সাজানোর এই আচারটি পালন করে যা দেবীর সাতটি রূপকে প্রতীকায়িত করে। আরেকটি প্রচলিত বালা হল লোহা বাঁধানো, পাত্রী প্রথম নতুন বাড়িতে প্রবেশ করলে শাশুড়ি এটি তাকে উপহার দেয়৷ সমৃদ্ধশীল পরিবারগুলি, মাঝে মাঝে, সোনা দিয়ে এই লোহা বাঁধিয়ে দেয়৷

পাঞ্জাবী পাত্রীদের চুড়ি আইভরি বা হাতির দাঁত দিয়ে তৈরি হয় এবং এগুলিকে বলে “চুড়া”৷ এই লাল আর সাদা চুড়িগুলি পাত্রীকে তার মা উপহার দেয়৷ চুড়া-পরার অনুষ্ঠান একটি বিশাল অনুষ্ঠান, যেটি বিয়ের দিন সকালবেলা অনুষ্ঠিত হয়৷

একইভাবে, গুজরাতি ও রাজস্থানী বিয়ের কনেরা বিবাহের সাতটি বচনের পবিত্র আচার “সপ্তপদী” সম্পাদনের আগে আইভরির চুড়ি পরে৷

নাকছাবি:

নাকছাবির কথা ভারতীয় পাঠ্যে প্রায় ষোড়শ শতাব্দীতে উল্লেখিত হয়েছিল৷ প্রাথমিকভাবে, নাকছাবি এমন একটি গহনা হিসাবে বিবেচিত ছিল যা কেবল মুসলিমরা পরে, তবে, মুসলিম সংস্কৃতির সঙ্গে একত্রীকরণের ফলে, নাকছাবি হিন্দু বিবাহের সময় কনের সজ্জার (সোলহা শৃঙ্গার) একটি ওতপ্রত অংশ হয়ে যায়৷

সাধারণত নাকছাবি তিনধরণের হয়: স্টাড, রিং এবং নাসামধ্য অলঙ্কার৷

মহারাষ্ট্রের “নথ” এবং গুজরাতের “নথদি” হল সোনার নাকছাবি যা দাম্পত্যকে প্রতীকায়িত করে৷ এমনকি, হিন্দি শব্দ ‘নথ’ কথার অর্থ হল প্রভু বা স্বামী৷ পাঞ্জাবীতে, নাকছাবি একটি চেনের সাথে সংযুক্ত থাকে, সাধারণত সোনার তৈরি এই নাকছাবিটি বিবাহিত মহিলার লাবণ্যের প্রতিনিধিত্ব করে৷

নথ যেকোন আকারের হতে পারে এবং স্থানীয় রীতি ও আচারের ওপর নির্ভর করে তা সাজানো হতেও পারে আবার নাও হতে পারে৷

“লউঙ্গ” হল উত্তর ভারতের একধরণের স্টাড যা দক্ষিণের স্টাড “ফুলি” বা “মুক্কুত্থি”র অনুরূপ, মহিলারা এগুলি পরে বোঝায় যে তারা বিবাহিত৷

উত্তর ভারতীয়রা নাকছাবিকে বলে ‘ব্লুয়াক’ (হিন্দি), অন্যদিকে দক্ষিণ ভারতে এটিকে বলে ‘বুলাক্কু’৷ এই রিংটি নথের মতই যেকোন আকারে তৈরি করা যায়৷

নাক-ফোঁটানোর ধারণাটি নিছক আচার বা প্রথার থেকে কিছুটা বেশি, অনেকে মনে করে এই প্রক্রিয়াটিতে স্বাস্থ্যের উপকারিতা রয়েছে৷

আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, নাসারন্ধ্রের বামদিকটি প্রজনন অঙ্গগুলির সাথে সংযুক্ত এবং এই দিকে ভেদনের ফলে প্রসব যন্ত্রণা (শিশুর জন্ম) কম হয় একই সাথে তা ঋতুস্রাবের সময় খিঁচ-ব্যথাও কমে৷

সোনার শুভ এবং মান্য স্থিতিকে গণ্য করে, সবসময় এটি কোমরের ওপরে পরা হয়৷ চুটকি এবং পায়েলের মত গহনা যা কোমরের তলায় পরা হয় তা সাধারণত রূপো বা অন্য ধাতুর তৈরি হয়৷