Published: 27 সেপ্টে 2017

সোনা কিভাবে ভারতের অর্থনীতিকে রক্ষা করেছিল

Importance of Gold in Indian economy

মনে হয় মাঝে মাঝেই, ভারত নিজেকে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পায়। 1991 সালের ভারতীয় অর্থনীতির সঙ্কট এইরকমই একটি উদাহরণ।

অরুনাভ ঘোষের আর্থিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাত্রায়: ভারত (Pathways Through Financial Crisis: India)- গবেষণাপত্রতে নথিকৃত আছে যে 1980-র দশক ধরে, বিনিয়োগকারীর বিশ্বাসে মন্দা দেখা যায়, যা কারেন্ট অ্যাকাউন্টের ঘাটতি এবং মুদ্রার অবমূল্যায়নের সাথে তীক্ষ্ম বিনিময় হারের অবচয়ের দিকে নিয়ে যায়।

80-র দশকের মাঝামাঝিতে, ভারতে পেমেন্ট ভারসাম্যের সমস্যা শুরু হয় এবং দশক শেষ হওয়ার আগে, ভারতীয় রুপি বা টাকার মূল্যের মারাত্মক পতন হয়। আন্তর্জাতিক রিসার্ভকে বর্ধিত করে এবং মূল্যের অপকর্ষ বিলম্বিত করে রিসার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া মুদ্রা রক্ষা করার চেষ্টা করেছিল, যদিও এই সমস্ত চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছিল।

1991-এর মাঝামাঝির মধ্যে, ভারতের বিদেশী রিসার্ভ প্রায় খালি হয়ে গেছিল: 1991সালের জানুয়ারিতে $1.2 বিলিয়ন থেকে একই বছরের জুন মাসের মধ্যে তা অর্ধেক হয়ে গেছিল। এর অর্থ হল ভারতের কাছে সাকুল্যে তিন সপ্তাহের আমদানির অর্থ মজুদ ছিল। সরকার অচল হতে বসেছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক নতুন ঋণ প্রত্যাহার করেছিল এবং ভারত সরকারকে প্রধান মুদ্রাগুলির বিরুদ্ধে তীক্ষ্ম মূল্যহ্রাসতা অনুমোদন করতে হয়েছিল-যার ফলে গুরুতর আর্থিক সঙ্কট তৈরি হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক মনিটরি তহবিল (International Monetary Fund, IMF) থেকে আপৎকালীন ঋণ সুরক্ষিত করাই ছিল ভারতের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, যার মূল্য ছিল $2.2 বিলিয়ন। ভারতের সোনা রিসার্ভ থেকে সেই সময় 67টন সোনা সমান্তরাল নিরাপত্তা হিসাবে ভারত বন্ধক রাখে। রিসার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া 47 টন সোনা ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডের কাছে এবং 20 টন সোনা ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ সুইৎজারল্যান্ডের কাছে বন্ধক রেখে $600 মিলিয়ন নেয় (আজকের মূল্যে 2,843.5কোটি টাকা)।

সোনার সাথে ভারতের দীর্ঘ-মেয়াদী এবং অন্তরঙ্গ সম্পর্ক থাকার ফলে, স্বাভাবিকভাবেই সরকার সোনা রিসার্ভ বন্ধক রেখে ধার নিয়েছে ঘোষণার পর জনগণের মধ্যে হৈচৈ পরে যায়। এই বন্ধকের পরে চন্দ্র শেখরের সরকারের দ্রুত পতন ঘটে, তবে সমান্তরাল হিসাবে সোনা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত পেমেন্টের ভারসাম্যের সঙ্কট উন্নত করতে সাহায্য করেছিল এবং সংশোধিত অর্থনীতির নতুন যুগ শুরু হয়েছিল।

18 বছর এগিয়ে যাওয়া যাক। ভারত সরকার পুরো বৃত্ত ঘুরে ফিরে আসে এবং IMF-এ থেকে 200 টন সোনা কেনে-যেটি 1991-এর সঙ্কটকালীন বন্ধক রাখা সোনার তিনগুণ। এই সিদ্ধান্ত মার্কিন ডলারের পতনের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবন্ধক হিসাবেই কেবল কাজ করেনা, সাথে গুরুত্বপূর্ণভাবে বিশ্বকে সেই সংকেতও দেয় যে ভারত পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠেছে এবং অর্থনীতিকে মনে করিয়েছে যে দেশটি আবার তার নিজ জায়গায় ফিরে এসেছে।

সোনা ভারতীয়দের বহু শতাব্দী ধরে বয়ে নিয়ে চলেছে, সেই সাথে ভারতকেও তার অর্থনীতিতে যথেষ্ট সাহায্য করেছে।