Published: 12 সেপ্টে 2017

উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির গহনা, যেগুলি সাত বোনের রাজ্য নামে পরিচিত

বিভিন্ন উপজাতি এবং উপ-উপজাতির বাসস্থান ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল তাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য দ্বারা নিখুঁতভাবে সুরক্ষিত এবং সংরক্ষিত। এই সাত বোনের রাজ্যগুলি হল অরুণাচল প্রদেশ, অসম, মেঘালয়, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা।

এই প্রবন্ধের মাধ্যমে, আমরা এই রাজ্যগুলির নিজস্ব এবং অন্যান্য গহনার সহজাত ধরণগুলি তুলে ধরব।

প্রাচুর্যময় অসম

এই আকর্ষণীয় সোনার গহনার কাজ বিস্তৃত পরিসরে পাওয়া যায় জোরহাট জেলার কোরাঙ্গা এলাকায় যেখানে পুরনো কিছু শিল্পীদের বংশধরদের পরিবারের বিক্রয়যোগ্য সামগ্রীর বাজার আছে। আকর্ষণীয়ভাবে অসমের গহনা সম্পূর্ণভাবে হস্তনির্মিত, তা সোনারই হোক বা অন্য কোন ধাতুর। ডুগডুগি, বেনা, জেথিপোতাই, জাপি, সিলিখা, ধুল এবং লোকাপারোর মত প্রথাগত জিনিসগুলি এখানে পাওয়া যায়। এই গহনা সাধারণত 24 ক্যারেট সোনা দিয়ে তৈরি হয়।

নেকলেস  বেনা, বিরি মোনি, সাতসোরি, মুকুতা মনি, গেজেরা, ছিলিখা মোনি, পোয়ালমোনি এবং মগরদানা
আংটি হরিনসাকুয়া, ছেনপাতা, জেথিনেজিয়া, বেখারপাতা এবং অন্যান্য
চুরি গামখারুস, মগরমুরিয়া খারু, সানছারুয়া খারুস বালা এবং গোটা খারু
বিয়ের গহনা থুরিয়া, মুথি-খারু, ডুগ-ডুগি, লোকা-পারো, কেরুমোনি, জোনবিরিস ঢোলবিরি, গাম-খারু, কেরু, বানা এবং গাল-পাতা

অসমের অন্যতম জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত একটি গহনা হল কোপো ফুল (কানের দুল)। এই কানের দুলটি অর্কিডের অনুরূপ নকশায় তৈরি, তবে বাইরের অংশ দুটি ছোট জুতোর একত্রিত সেটি আবার একটি ফুলের নকশা দ্বারা সজ্জিত।

মনে করা হয় যে গামখেরু, গোলপাতা এবং থুরিয়া অন্য়তম দামি গহনা।

মণিপুর-ভারতের রত্ন

এই রাজ্যটি এক সময় সুবর্ণ ভূ নামে পরিচিত ছিল, যার অর্থ ‘সোনার রাজ্য’। প্রাচীন পাঠ্যে, উল্লেখ করা আছে যে মণিপুর সোনার বিশেষজ্ঞদের স্থান ছিল। মেইতেই এবং বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায় এই রাজ্যকে বিভিন্ন উপজাতির সাথে নিয়ন্ত্রণ করে।

মেইতেই সম্প্রদায় ব্যাপকভাবে হলুদ ধাতু দিয়ে তৈরি গহনায় নিজেদের অলঙ্কৃত করে। মহিলারা লিকচৌ বা কাঁথা, খোওনাপ্পি এবং লিকসোইয়ের প্রতি অনুরক্ত। অতিরিক্তভাবে, কিয়াঙ্গ-লিকফাঙ্গ, মারেই, হেইবি মাপাল এবং খিমাহুরনের মত প্রথাগত মণিপুরী গহনা আজও বিস্তর রূপে শোভিত।

যদিও এই গহনাগুলি কেবলমাত্র প্রথাগত মণিপুরী জহুরিরাই বানাতে পারে।

চমকপ্রদ মেঘালয়

এই রাজ্যে মূলত খাসি এবং জয়ন্তি উপজাতির আধিপত্য। উপজাতির সদস্যরা সোনার এবং প্রবালের গহনার প্রতি অনুরাগী যেগগুলি সাধারণত 24 ক্যারেট সোনা দিয়ে তৈরি হয়। পয়লা, নেকলেস এবং পেনডেন্ট- কিঞ্জরি ক্ষেইর একটি মোটা লাল প্রবালের পুঁতির রজ্জুতে জড়ানো থাকে, এটি বিভিন্ন উৎসবে অনুষ্ঠানে পরে।

ফাঁকা সোনার পুঁতির একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল এগুলি গালা বা লাক্ষা দিয়ে পূরণ করা হয় আর তারপর সেগুলি মস্তকাবরণ এবং নেকলেসের মত বিভিন্ন অলঙ্কারে ব্যবহৃত হয়। এই অলঙ্কারগুলি লোক-নৃত্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

বিস্ময়কর অরুণাচল প্রদেশ

এই রাজ্যটি ভারতের একবারে পূর্বপ্রাপ্তে অবস্থিত এবং কুড়িটিরও বেশি উপজাতি ও উপ-উপজাতির বাসস্থান। উপজাতিকে আধিপত্য দিয়ে, এই রাজ্যের গহনা বেশিরভাগই বাঁশ, বেত, বীজ এবং নলাগড়ার মত প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি হয়, তবে উপজাতিরাও তাদের অলঙ্কার তৈরির জন্য সোনা, রূপো এবং লোহার মত ধাতু ব্যবহার করে। এই উপজাতির মহিলারা মস্তকাবরণ, কানের দুল, নাকছাবি, নেকলেস এবং চুরির মত তাদের ভারি গহনার জন্য বিখ্যাত।

লক্ষ্যণীয় হল, এই রাজ্যের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া সুবনসিরি নদীর তীরে সোনার চূর্ণ পাওয়া যায় বলে এটি সোনার নদী নামে খ্যাত।

রহস্যময় মিজোরাম

মিজোরামের উপজাতিরা তাদের যে অলঙ্কার দিয়ে সজ্জিত করে তা মূলত বাঁত এবং বেতের মত প্রাকৃতিক উপাদান। উপজাতির পুরুষ এবং মহিলারা তাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত অলঙ্কারে অলঙ্কৃত করে, যার অন্তর্ভুক্ত পালক দেওয়া পাগড়ি, পুঁতির নেকলেস, কাঠের বালা, নূপুর ইত্যাদি। এদের মধ্যে কিছু উপজাতি গভীর অরণ্যের এলাকায় বসবাস করে, এদের ‘রহস্যময় উপজাতি’ বলা হয়। তাদের সংস্কৃতি, প্রথা এবং অলঙ্করণ এখনও প্রায় অজানা।

একইভাবে,ত্রিপুরা এবং নাগাল্যান্ড রাজ্যের উপজাতিজের অলঙ্কারও প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি হয়।